জানতে হবে গোসলের নিয়ম
গোসল আরবি শব্দ। অর্থ হচ্ছে পুরো শরীর ধোয়া। শরিয়তের পরিভাষায়, পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দিয়ে পুরো শরীর ধোয়াকে গোসল বলা হয়। আল্লাহ নির্দেশ দেন, আর যদি তোমরা অপবিত্র হও, তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও। (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৬); মাসিক বন্ধ হওয়ার পর নারীদের পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ফরজ। সন্তান প্রসবের পর নারীদের গোসল করা ফরজ। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজ।
গোসলের ফরজ কাজ তিনটি
১. কুলি করা। (বুখারি, ইবনে মাজাহ)
২. নাকে পানি দেওয়া। (বুখারি, ইবনে মাজাহ)
৩. সারা শরীর পানি দিয়ে এমনভাবে ধোয়া, যাতে দেহের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। (আবু দাউদ)
ফরজ গোসলের নিয়ম
১. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে গোসল শুরু করা।
২. উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়া।
৩. বাঁ হাতে পানি দিয়ে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করা।
৪. কাপড়ে বা শরীরের কোনো অংশে নাপাক কিছু লেগে থাকলে তা ধুয়ে নেওয়া।
৫. পা ধোয়া ছাড়া অজু করে নেওয়া।
৬. গোসলের তিন কাজ— কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া এবং পুরো শরীর ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া। যাতে শরীরের একটি লোমকুপও শুকনো না থাকে।
৭. গোসলের স্থান থেকে একটু সরে এসে উভয় পা ভালোভাবে ধোয়া।
গোসলের শিষ্টাচার হলো
উঁচু স্থানে বসে গোসল করা, যাতে পানি গড়িয়ে যায় ও গায়ে ছিটা না লাগে। পানির অপচয় করা যাবে না। লোকসমাগম যেখানে হয়, সেই স্থানে গোসল না করা। ডান দিক থেকে গোসল শুরু করা (রদ্দুল মুহতার ১/৯৪)। বাহ্যিক অঙ্গের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনা থাকলে ফরজ গোসল শুদ্ধ হবে না (শরহে মুখতাসারুত তাহাভি ১/৫১০)।
নেল পালিশ, রং বা সুপার গ্লু ইত্যাদি যা শরীরে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, তা উঠিয়ে নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি, না হলে গোসল শুদ্ধ হবে না। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩)
ফরজ গোসলে পুরুষের দাঁড়ি ও মাথার চুল গোড়ায় সম্পূর্ণ ভালোভাবে ভিজতে হবে। নারীদের চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো। সম্পূর্ণ চুল ধোয়া। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৪, রদ্দুল মুহতার ১/১৪২); নারীদের কান ও নাকফুল নাড়িয়ে ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। (আল মুহিতুল বুরহানি ১/৮০); তবে কানের ভেতর ও নাভিতে পানি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
অনেকের দাঁতে ক্যাপ লাগানো হয়ে থাকে, কুলি করলে নিচে পানি পৌঁছে না এবং তা খুললেও ক্ষতির আশঙ্কা হয়, তাহলে গোসলের সময় তা খোলা জরুরি নয়, আর যদি এমন কিছু লাগানো থাকে, যা সহজে খোলা যায়, তাহলে খুলে তার নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি। (রদ্দুল মুহতার ১/১৫৪, আহসানুল ফাতাওয়া ২/৩২)।
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজে কিফায়া। কেউ কেউ ওয়াজিব বলেছেন। যাঁরা গোসল দিতে পারদর্শী, তাঁরাই মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেবেন।
১. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার সময় গোসলের খাটে শোয়াতে হয়। এরপর পরনের কাপড় সরিয়ে পুরুষ হলে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটা কাপড় রাখতে হবে।
২. প্রায় বসার মতো করে মৃত ব্যক্তির মাথা উঁচু করে আলতোভাবে পেট চাপ দিয়ে বেশি করে পানি ঢেলে ময়লা বের করতে হয়।
৩. গোসলদাতার হাতে একটি ন্যাকড়া পেঁচিয়ে নেওয়া বা হাত মোজা পরে নেওয়া।
৪. গোসলের নিয়ত করে প্রথমে মৃত ব্যক্তিকে অজুর ন্যায় ধুয়ে নেওয়া। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করানো যাবে না। বরং ভিজা আঙুলদ্বয় নাকে ও মুখে প্রবেশ করানো।
৫. সন্তান প্রসব করার পর মারা গেলে মুখ ও নাকে পানি পৌঁছানো জরুরি।
৬. তুলা দিয়ে দাঁতের মাড়ি পরিষ্কার করে দেওয়া।
৭. বরইপাতা ও সাবান মেশানো হালকা গরম পানি দিয়ে প্রথমে মৃত ব্যক্তির মাথা ও দাঁড়ি ধোয়া।
৮. এরপর ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত ডান পাশ ধুয়ে তারপর পিঠের ডান অংশ ধোয়া।
৯. এভাবে তিনবার ধৌত করা। এরপরও যদি ময়লা থাকে, তবে ময়লা পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত বেজোড় করে ধৌত করা।
১০. গোসলের শেষবারের পানির সঙ্গে করপুর, আতর মিশিয়ে সারা শরীরে পানি ঢেলে দেওয়া।
১১. মৃত ব্যক্তির গোঁফ বা নখ বেশি লম্বা হলে কেটে ফেলা। (তবে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে)
১২. একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মৃত ব্যক্তির শরীরের পানি মুছে দেওয়া।
১৩. মৃত ব্যক্তি নারী হলে চুল বেণি করে পেছনের দিকে রাখা।
১৪. গোসল দেওয়ার পর দেহ থেকে ময়লা বের হলে, বের হওয়া স্থান ধৌত করে তুলা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে কেউ বলেছেন, অজু করাতে হবে।