সুরা আনআমে রয়েছে কিছু উপদেশ

সুরা আনআম পবিত্র কোরআনের ষষ্ঠ সুরা। মক্কায় অবতীর্ণ এই সুরার ২০ রুকু, ১৬৫ আয়াত। মোহাম্মদ (সা.) হিজরতের সময় মক্কায় অবতীর্ণ এই সুরার ছয়টি আয়াত মদিনায় অবতীর্ণ হয়। অংশীবাদের আলোচনা, বিশ্বাসীদের পুরস্কার, তওহিদের বর্ণনা, পরকালের জীবন, অমুসলিমদের দ্বারা অত্যাচারিত মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবায়ে কিরামের জন্য সান্ত্বনা রয়েছে এ সুরায়।

কোরআনে আছে, ‘বলো, এসো, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যা হারাম করেছেন, তা তোমাদের পড়ে শোনাই।' তা এই 'তোমরা তাঁর কোনো শরিক করবে না, পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, দারিদ্র্যের জন্য তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দিয়ে থাকি। প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক, অশ্লীল আচরণের কাছে যেয়ো না। আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা কোরো না। তোমাদেরকে তিনি এ-নির্দেশ দিয়েছেন যেন তোমরা বুঝতে পারো।’

আরও পড়ুন

আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা পিতৃহীনের বয়স না হওয়া পর্যন্ত সৎ উদ্দেশ্য ছাড়া তার সম্পত্তির কাছে যেয়ো না। আর তোমরা পরিমাপ ও ওজন ন্যায্যভাবে করবে। আমি কাউকেও তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্বভার অর্পণ করি না। আর যখন তোমরা কথা বলবে তখন আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হলেও ন্যায্য বলবে আর আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। এইভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’

আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘আর নিশ্চয়ই এ আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এ-ই অনুসরণ করবে আর অন্য পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তোমরা সাবধান হও।’ (আয়াত: ১৫১, ১৫২, ১৫৩ )

আরও পড়ুন

এ সুরায় দিনরাতের চক্র এবং নিখিলের রহস্যের কথা বলা হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনিই উষার উন্মেষ ঘটান। আর তিনিই বিশ্রামের জন্য রাত্রি এবং গণনার জন্য চন্দ্র ও সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন। এসব পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ কর্তৃক সুবিন্যস্ত। ৯৭. আর তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন যাতে করে তোমরা তার সাহায্যে স্থলে ও সমুদ্রে অন্ধকারে পথ পাও । জ্ঞানীদের জন্য তিনি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বয়ান করেছেন। (আয়াত: ৯৬-৯৭)

বলা হয়েছে, আল্লাহকে যাঁরা বিশ্বাস করেন এবং সেভাবে জীবন বাস্তবায়ন করেন, তারা সফল। আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা বিশ্বাস করেছে ও তাদের বিশ্বাসকে সীমালঙ্ঘন করে কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদেরই জন্য এবং তারাই সৎ পথপ্রাপ্ত।’ (আয়াত: ৮২)

আরও পড়ুন

আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথামতো চল তবে তারা তোমাকে আল্লাহ্রপথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো কেবল অনুমানের অনুসরণ করে। আর তারা মিথ্যাই বলে। কে তাঁর পথ ছেড়ে বিপথে যায় তা তোমার প্রতিপালক ভালো ক'রেই জানেন। আর কে সৎ পথে আছে তা-ও তিনি ভালো করে জানেন।’ (আয়াত: ১১৬)

সুরাটির শেষ দিকে আল্লাহর কাছে মানুষের মর্যাদা এবং মানবজাতির সৃষ্টি করার পেছনের রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। কোরআনে আছে, ‘তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে খলিফা (প্রতিনিধি) করেছেন। আর তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন তা দিয়ে পরীক্ষা করার জন্য তোমাদের কাউকে অন্যের ওপর মর্যাদায় বড় করেছেন। তোমার প্রতিপালকের শাস্তি দিতে সময় লাগে না। আবার তিনি তো ক্ষমা করেন, করুণা করেন।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ১৬৫, কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)

আরও পড়ুন