সাদ (রা.)–এর ইসলাম গ্রহণ

সাহাবি সাদ ইবনে ওয়াক্কাস (রা.) সম্পর্কে কোরআনে কয়েকটি আয়াত নাজিল হয়। তিনি ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর মা হামনা বিনতে সুফিয়ান বিন উমাইয়া তাঁকে বললেন, হে সাদ! আমি শুনতে পেলাম তুমি ধর্মত্যাগী হয়েছ? তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত মুহাম্মদ (সা.)–কে অমান্য না করবে এবং তোমার আগের ধর্মে ফিরে না আসবে ততক্ষণ আমি খাবার খাব না। ঘরের ভেতরেও থাকব না। তাঁর মা আরও বললেন, তুমি না বলো, আল্লাহ সন্তানকে পিতা–মাতার আদেশ পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন? যদি তা মানো, তবে আমি তোমার মা হয়ে তোমাকে আদেশ করছি, তুমি তা পালন করো।

এ কথা শুনে সাদ ইবনে ওয়াক্কাস (রা.) প্রতিজ্ঞা করলেন, আপনার জীবন যদি ১০০ বারও বের হয়ে যায়, তাতেও আমি আমার দ্বীন ত্যাগ করব না।

আরও পড়ুন

কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, তাঁর মা না খাওয়ার প্রতিজ্ঞা করার পর তিনি বেহুঁশ হয়ে যেতেন। লোকেরা মুখ হাঁ করিয়ে খাবার খাওয়াতেন তাঁকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সুরা লোকমানের ১৪ ও ১৫ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। মা–বাবার কথার আনুগত্য না করার আদেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে ভালো আচরণ করার আদেশ করা হয়।

কোরআনে আছে, ‘আর আমি মানুষকে তার পিতা–মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দুই বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সঙ্গে এমন বিষয়কে শরিক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে। (সুরা লোকমান, আয়াত: ১৪–১৫)

আরও পড়ুন

সাদের আরেক ভাই ছিল, তার নাম উমর। মা বেহুঁশ হয়ে গেলে তিনি এসে মাকে পানি পান করালেন। জ্ঞান ফিরে আসার পর ওই মা সাদ (রা.)-কে অভিশাপ দিতে লাগলেন। এ পরিস্থিতিতে সাদ (রা.) নবী করিম (সা.)–এর কাছে এসে মায়ের পুরো ঘটনা বর্ণনা করলেন। তখন আল্লাহ আয়াত নাজিল করেন। (সহি মুসলিম, হাদিস: ৬৩৯১)

ওহুদের যুদ্ধের একপর্যায়ে মুসলিম বাহিনী যখন চরম বিপর্যয়ের সামনে, তখন মুষ্টিমেয় কিছু সেনা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাসুল (সা.)-কে ঘিরে প্রতিরক্ষা ব্যূহ রচনা করেন। সাদ (রা.) সেখানে ছিলেন। ওহুদের যুদ্ধে সাদ (রা.) শত্রুপক্ষের প্রবল আক্রমণ থেকে রাসুল (সা.)-কে হেফাজতের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে লড়েছিলেন।

আরও পড়ুন

দশম হিজরিতে বিদায় হজের কিছুদিন আগে সাদ (রা.) খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাসুল (সা.) প্রায়ই তাঁকে দেখতে যেতেন। হজরত সাদ (রা.) বলেন, ‘একদিন রাসুল (সা.) আমার সঙ্গে কথা বলার পর আমার কপালে হাত রাখলেন। তারপর মুখমণ্ডলের ওপর হাতের স্পর্শ বুলিয়ে পেট পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ, আপনি সাদকে শিফা দান করুন।’ রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর সাদ (রা.) এ স্মৃতি মনে করে বলতেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতের সেই শীতল স্পর্শ ও প্রশান্তি আজও আমি অনুভব করি।’

আরও পড়ুন