জমজমের পানি: পানে অবাধ, বিক্রি নয়
কাবাঘরের কাছে হাজরে আসওয়াদের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে আছে জমজম কূপ। দুনিয়ায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের যত অনুপম নিদর্শন আছে, তার মধ্যে জমজম কূপ অন্যতম। এ কূপের পানি অসম্ভব স্বচ্ছ, স্বাদু ও বরকতময়।
জানা যায়, জমজম কূপ প্রথমে খোলা অবস্থায় ছিল। তখন কূপ থেকে বালতি দিয়ে পানি তোলা হতো। জমজমের মুখ থেকে প্রায় ৪০ হাত গভীর পর্যন্ত প্লাস্টার করা। তার নিচে পাথরকাটা অংশ আছে আরও প্রায় ২৯ হাত। এসব লাল পাথরের ফাঁক দিয়ে তিনটি প্রবাহ থেকে আসে পানি। একটি কাবার দিক থেকে, একটি সাফা পাহাড়ের দিক থেকে, আরেকটি মারওয়া পাহাড়ের দিক থেকে।
হজরত হাজেরা (আ.) এবং শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কাবার পাশে বড় একটি গাছের ছায়ায় রেখে গিয়েছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। তাঁদের দিয়ে গিয়েছিলেন কিছু খেজুর আর এক মশক পানি। কাবা শরিফের জায়গাটি তখন ছিল উঁচু একটি টিলার মতো। পানি ফুরিয়ে গেলে হজরত হাজেরা (আ.) পানির জন্য কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ছোটাছুটি করতে থাকেন। সাতবার ছোটাছুটির পর একটি আওয়াজ শুনে তিনি কাবার পাশে এসে দেখেন, চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে পানি। তিনি পানির উৎসে চারদিকে বালুর বাঁধ দেন। পরে খনন করে এ কূপকে আরও প্রশস্ত করেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)।
সৌদি সরকার জমজম কূপ পরিষ্কার করিয়েছে। পরিষ্কার করার সময় ডুবুরিরা কূপ থেকে তুলে আনেন বালতি, মগ, মুদ্রা ও অন্যান্য জিনিস। সে সময়েই পানি আসার উৎসগুলো শনাক্ত করা হয়।
এ সময় মাটির নিচে হাজিদের জমজমের পানি পানের জন্য একটি স্থান তৈরি করে দেয় সৌদি সরকার। আধুনিকভাবে সাজানো এই কক্ষটির প্রবেশপথ ছিল কাবা থেকে অনেক দূরে সাফা পাহাড়ের কাছে। সেখান থেকে জমজম কূপটির অবস্থান এবং পানি তোলার মোটর, পাইপ ইত্যাদি সবই দেখা যেত। ক্রমে ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ২০০৩ সালে ওই কক্ষটি বন্ধ করে ওপরে পানি পানের ব্যবস্থা করা হয়। কাবা শরিফের আশপাশে, কল ও ছোট ড্রামের মাধ্যমে জমজমের ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা থাকে সব সময়। হজের মৌসুমে প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার পানি পান করেন হাজিরা। হজের মৌসুম ছাড়াও ওমরাহ আর জিয়ারতকারীরা প্রতিদিন এ পানি পান করেন। মদিনায় মসজিদে নববিতে প্রতিদিন গাড়ির মাধ্যমে পানি পৌঁছে দেওয়া হয়।
জমজমের পানি যত খুশি পান করা যায়। কনটেইনারে ভরে আনতেও নিষেধ নেই। তবে এ পানি বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মসজিদের ভেতর পর্যাপ্ত পানির (ঠান্ডা ও স্বাভাবিক) ব্যবস্থা আছে।