যারা হাত গুটিয়ে বসে থাকে

ঘটনাটি ইসলামের প্রসিদ্ধ তাবেয়ি কাতাদা (রহ.) বর্ণনা করেছেন। তিনি ছিলেন হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর একজন ছাত্র। ইবনে আব্বাস (রা.) ছিলেন সেই সাহাবি, যার জ্ঞান–গরিমায় মুগ্ধ হয়ে স্বয়ং মহানবী (সা.) তাঁর জন্য দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি ইবনে আব্বাসের জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।’

একদিন কাতাদা (রহ.) তাঁর শিক্ষকের ঘরে প্রবেশ করলেন। কাতাদা (রহ.) বলেন, ‘আমি গিয়ে দেখলাম ইবনে আব্বাস (রা.) কাঁদছেন। তাঁর কোলের ওপর কোরআন রাখা ছিল। কাতাদা (রহ.) কী করবেন বুঝতে পারলেন না। তিনি কিছুক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে থাকলেন। এরপর ইবনে আব্বাস (রা.) কান্না থামালে তিনি পাশে গিয়ে বসলেন, ‘আপনি কাঁদছেন কেন, হে আমার শিক্ষক?’ কাতাদা (রহ.) জিজ্ঞাসা করলেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, ‘হে কাতাদা আমি কোরআনের এই অংশটুকু পড়ছিলাম।’ কাতাদা (রহ.) দেখলেন, সুরা আরাফের কিছু অংশ, ‘আর তাদের কাছে সে জনপদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো, যা ছিল নদীর তীরে। যখন তারা শনিবারের নির্দেশ অমান্য করতে লাগল, এর ফলে শনিবার প্রচুরসংখ্যক মাছ নদীতে আসত। বাকি দিনগুলোতে এত মাছ আসত না। এভাবেই আমি তাদের পরীক্ষা করেছিলাম। কারণ, তারা ছিল অবাধ্য।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৬৩)

আরও পড়ুন

বনি ইসরাইলের এক সম্প্রদায় ছিল, যারা নদীর তীরে বসবাস করত। তাদের বেশির ভাগই ছিল জেলে। নদীতে মাছ ধরে তারা জীবিকা উপার্জন করত। তাদের ওপর আল্লাহর একটি বিশেষ বিধান কার্যকর ছিল যে তারা শনিবার কোনো মাছ ধরতে পারবে না। কিন্তু তাদের অনেকেই এই নির্দেশ অমান্য করেছিল। এর ফলে আল্লাহ তাদের পরীক্ষাকে আরও কঠিন করে দিলেন।

শনিবার এলেই নদীর সবচেয়ে বড় মাছগুলো আসত। আবার রোববারের আগেই সেগুলো চলে যেত।

শয়তান এই জেলেদের মনে কুমন্ত্রণা দিতে লাগল, ‘আচ্ছা, এক কাজ করলে কেমন হয়, তোমরা শনিবার জাল ফেলে রাখবে। মাছ ঠিকই আটকাবে কিন্তু তোমরা তা ধরবে না। তোমরা রোববার জাল ওঠাবে। এভাবে আল্লাহর বিধানও পালন হলো, আবার মাছও ধরা হলো।’

তারা শয়তানের কুমন্ত্রণা মেনে নিল। অর্থাৎ আল্লাহর বিধানকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করল।

আরও পড়ুন

পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণির মানুষের কথা উল্লেখ করেন, যারা সেই সম্প্রদায়ে বাস করত। একদল আল্লাহর বিধান অমান্য করেছিল। আরেক দল মানুষ তাদের উপদেশ দিচ্ছিল, যাতে তারা এই কাজ না করে। এ ছাড়া আরেক দল লোক ছিল সেই সমাজে, যারা কোনো কিছুই করত না। তারা বলত, ‘যারা পাপ করছে তাদের উপদেশ দিয়ে লাভ কী, তারা তো ধ্বংস হবেই।’ যারা উপদেশ দিত তারা জবাব দিল, ‘আমরা তাদের উপদেশ দিচ্ছি, যাতে আল্লাহর সামনে বলতে পারি যে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকিনি।’

পরের আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আমি সেসব লোককে মুক্তি দান করলাম, যারা মন্দ কাজ থেকে বারণ করত। আর গোনাহগারদের অবাধ্যতার জন্য নিকৃষ্টতম শাস্তি ধার্য করলাম।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৬৫)

একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই আয়াতে শুধু দুই শ্রেণির মানুষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যারা হাত গুটিয়ে বসে ছিল, যারা সৎ কাজের উপদেশ দেয়নি, তাদের আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করারও প্রয়োজন বোধ করেনি।

আরও পড়ুন

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) কাঁদছিলেন এ জন্য যে তিনি জীবনে কত অন্যায় হতে দেখেছেন, অথচ অনেক সময় তার কিছুই করার ছিল না।

কাতাদা (রহ.) বললেন, ‘আপনি কাঁদবেন না। অন্তত তারা সেই পাপকে ঘৃণা করেছিল। আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না।’

ইবনে আব্বাস (রা.) বুঝলেন তাঁর ছাত্র তাঁকে আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি কাতাদা (রহ.)-এর কথা শুনে খুশি হলেন। তাকে গায়ের একটি চাদর উপহার হিসেবে দিয়ে দিলেন।

এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা হলো, আল্লাহর বিধানকে ফাঁকি দেওয়ার পরিণতি ভয়াবহ এবং আল্লাহ তাআলা তাদের বেশি পছন্দ করেন, যারা সৎ কাজের আদেশ করে এবং অন্যায় কাজে বাধা দেয়।

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ

আরও পড়ুন