ব্যক্তিই যখন একটি জাতি
‘নিশ্চয়ই ইব্রাহিম একাই একটি জাতি। সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে সে আল্লাহর ইবাদত করত এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।’ (সুরা নহল, আয়াত: ১২০)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইব্রাহিম (আ.)–কে একটি জাতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। কিন্তু এর মানে কী? অনেকের মতে, জাতি বলতে এখানে ইব্রাহিম (আ.)–এর বংশ থেকে যে জাতিগুলো তৈরি হতে যাচ্ছে, সেটা বোঝাচ্ছে।
আরেক হাদিসে আমরা দেখতে পাই, আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউস (রা.)–কে একটি জাতির সঙ্গে তুলনা করেছেন।
হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইবনে আব্বাস (রা.)–এর একজন ছাত্র। তাঁর নাম ছিল আবুল আবদাইন। তিনি ইবনে মকসুদ (রা.)–এর কাছে এসে বললেন, ‘আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই। আপনি ছাড়া এই প্রশ্নের জবাব আর কেউ দিতে পারবেন বলে আমি মনে করি না।’
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন, ‘বলো, কী তোমার প্রশ্ন?’
‘আল্লাহ সুরা নাহলের এই আয়াতে ইব্রাহিম (আ)–কে একটি জাতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। আবার মহানবী (সা.) নিজে আপনাকে বলেছেন, আপনি হলেন একটি জাতি। এর মানে কী?’
ইবনে মাসউদ (রা.) উত্তরে বললেন, ‘নিশ্চয়ই মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) হলেন একটি জাতি। তিনি আল্লাহর ইবাদত করেন এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত না।’
উত্তর শুনে আবুল আবদাইন বললেন, ‘আপনি বোধ হয় ভুল করছেন ইবনে মাসউদ, এখানে তো ইব্রাহিম (আ)–কে জাতি বলা হয়েছে, মুয়াজ (রা.)–কে নয়।’
ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন, ‘তুমি কি জানো, জাতি বলতে কী বোঝায়?’
আবুল আবদাইন বিনয়ী হয়ে বললেন, ‘আল্লাহ আর তার রাসুলই ভালো জানেন।’
এবার ইবনে মাসউদ (রা.) বলতে শুরু করলেন, ‘জাতি সেই ব্যক্তিদের বলা হয়, যাঁরা একাই একটি জাতির কাজ করে ফেলতে পারেন। যাঁরা মানুষকে ভালো কাজের শিক্ষা দেন, দ্বীন শিক্ষা দেন, যাঁরা কঠিন মুহূর্তেও আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পথে লেগে থাকেন। তাঁদের এই আত্মত্যাগ লাখো মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে আসে। তাই তাঁদের জাতির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) একজন জাতি। তিনিও মানুষকে জ্ঞান শিক্ষা দেন এবং তাতে লেগে থাকেন।’
অর্থাৎ ইবনে মাসউদ (রা.)–এর মতে, জাতি হলো সেই ব্যক্তি, যাঁরা নিষ্ঠার সঙ্গে সৎ পথে লেগে থাকেন। যাঁরা মানুষকে সঠিক পথে আহ্বান করেন এবং পরিস্থিতি কঠিন হয়ে গেলেও তাঁরা পিছপা হন না।
আমাদের নবী ইব্রাহিম (আ.) একাই পুরো একটি জাতির ভিত্তি স্থাপন করে দিয়ে গেছেন। ইবনে মাসউদ (রা.) নিজেও এত বেশি মানুষকে দ্বীনের শিক্ষা দান করেছেন যে অনেক মানুষ তার শিক্ষা পেয়ে ইসলামকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিয়েছিল।
এখান থেকে আমাদের শিক্ষা হলো, দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবি। অন্যকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার কথা আমরা চিন্তাও করি না। অথচ সাহাবিরা প্রতিযোগিতা করতেন কীভাবে অন্যদেরও দ্বীনের পথে ফেরানো যায়। তাঁরা ঠিকই জানতেন, সারা জীবন একা একা নামাজ-রোজা করেও কখনো সফল হওয়া সম্ভব না, যদি আমাদের পাশের মানুষগুলো ভালো পথে ফিরে না আসে।
অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ