দারুল আরকাম ছিল মুসলমানদের আশ্রয়স্থল

দারুল আরকাম মানে আরকামের ঘর। ঘরটির অবস্থান ছিল মক্কার সাফা পাহাড়ের কাছে। সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে সাঈ করার সময় বাড়িটির দরজার সামনে দিয়ে যেতে হতো। আব্বাসি খলিফা আবু জাফর আল মনসুরের সময় পর্যন্ত বাড়িটি অবিকৃত ছিল। এর পর আল-আরকামের এক প্রৌত্র আবদুল্লাহ ইবনে উসমান কারাগার থেকে মুক্তি পেতে তাঁর ভাগের অংশ খলিফা মনসুরের কাছে ১৭ হাজার দিনারে বিক্রি করে দেন। খলিফা মনসুরের পর খলিফা মাহদী এ বাড়ি দান করেন। তিনি বাড়িটির পুরোনো কাঠামো সংস্কার করেন। এভাবে বেশ কিছু হাত বদল হয়ে যুগে যুগে বাড়িটির পরিবর্তন সাধিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে এক সময় বাড়িটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

ইসলামের সংকটপর্বে দারুল আরকাম ছিল রাসুল (সা.) ও মুসলমানদের আশ্রয়স্থল। সেটি হয়ে উঠেছিল ওহি নাজিলেরও অন্যতম স্থান। বাসাটির মালিক ছিলেন আল-আরকাম ইবনে আবিল আরকাম (রা.)।

আরও পড়ুন

দারুল আরকাম বা আরকামের বাড়ির কথা উল্লেখ না করে ইসলামের প্রথম পর্যায়ের ইতিহাস আলোচনা করা সম্ভব নয়। ইসলামের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ বাড়ির ভূমিকা অনন্য। নবুয়তের প্রথম দিকে ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা ও ইবাদতের নিয়মনীতি এখানে শেখানো হতো। সে সময় অল্প যে কজন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তাঁরা এ বাসায় রাসুল (সা.)–এর সঙ্গে মিলিত হতেন। উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) এ বাড়িতে ইসলামের ঘোষণা দেন।

আল-আকরামের জন্ম ৫৯৭ খ্রিষ্টাব্দে। জাহেলি যুগের আরবে তিনি বিশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। ইসলামপূর্ব যুগে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর নেতৃত্বে মক্কায় ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে যে কল্যাণ সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আরকাম ছিলেন তাঁর অন্যতম সদস্য। তাঁর দাদা ছিলেন মক্কার একজন নেতা।

আরকাম (রা.) ১১–১২ জনের পরই ইসলাম গ্রহণ করেন। মুসলিমদের অবস্থা সে সময় সংকটজনক। মক্কার অবিশ্বাসীরা চাচ্ছিল, শক্তি অর্জনের আগেই ইসলামের আন্দোলনটিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে।

আরও পড়ুন

আরকাম (রা.)–এর ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর বাড়িটি মুসলিমদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পরিণত হয়। রাসুল (সা.) এখানে ইসলামে আসা নতুন মুসলমানদের সঙ্গে একত্র হয়ে বৈঠক করতেন। রাসুল (সা.) ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে এখান থেকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন।

উমর (রা.) ইসলাম গ্রহণের পর ঘর থেকে বেরিয়ে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত ও শিক্ষাদান শুরু হয়। মুসলমানরা আরকামের বাসা থেকে বের হয়ে মসজিদে হারামে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়েন। আবু বকর (রা.) কাবা প্রাঙ্গণে উপস্থিত কুরাইশদের সম্বোধন করে ইসলামের দাওয়াত তুলে ধরতেই আবু বকরের ওপর তারা হামলা করেছিল। এভাবে মক্কায় প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার সূচনা।

আরও পড়ুন

নবুয়তের ১৩তম বছরে মক্কার অন্য মুসলমানদের সঙ্গে আল-আরকাম (রা.) মদিনায় হিজরত করেন। এর পর মদিনায় স্থায়ীভাবে থাকার সময় মক্কার ঐতিহাসিক এই বাড়িটি সন্তানদের জন্য ওয়াকফ করে যান।

আল-আরকাম (রা.) বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এ যুদ্ধের জন্য রাসুল (সা.) তাঁকে ‘আল-মারজুবান’ নামের একটি তলোয়ার দিয়েছিলেন। সততা ছিল আরকাম (রা.)–এর চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। রাতের ইবাদতের প্রতি ছিল তাঁর প্রবল আকর্ষণ।

৮৩ বছর বয়সে তিনি মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর অসিয়ত অনুযায়ী সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) তাঁর জানাজা পড়ান। মদিনার জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুন