সুরা তাহরিমে মানুষের জন্য শিক্ষা
সুরা তাহরিম পবিত্র কোরআনের ৬৬তম সুরা। এর ২ রুকু, ১২ আয়াত। তাহরিম মানে হারাম মনে করা। হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহ বলছেন, ‘আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তা তুমি কেন হারাম মনে করো।’
আসরের নামাজের পর রাসুল (সা.) তাঁর পত্নীদের সঙ্গে অল্পক্ষণের জন্য হলেও দোয়া করতেন। মধু পান করার জন্য জয়নাবের (রা.) গৃহে তিনি একাধারে অবস্থান করায় বিলম্ব হলে তাঁর অপর দুই স্ত্রী আয়েশা (রা.) ও হাফসা (রা.) অনুযোগ করেন। এতে রাসুল (সা.) আর মধু খাবেন না বলে শপথ করেন। এই প্রেক্ষাপটে সুরাটির অবতারণা।
আয়েশা ও হাফসাকে (রা.) এ সুরায় তওবা করে পারিবারিক জীবনে শান্তি আনার উপদেশ দেওয়া হয়। নুহ (আ.) ও লুত (আ.)-এর স্ত্রীদের উল্লেখ করে এতে বলা হয় যে তাঁরা নবী (সা.)–এর পত্নী হওয়া সত্ত্বেও নিজের কর্মের জন্য নরক ভোগ করেছিল। অন্যদিকে ফেরাউনের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও সৎ কর্মের জন্য তার স্ত্রী জান্নাত লাভ করেন।
এ সুরায় আল্লাহর দেওয়া হালালকে হারাম করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আল্লাহ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন, কেন তুমি তা নিষিদ্ধ করছ তোমাদের স্ত্রীদের খুশি করার জন্য? আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (আয়াত: ১)
এর পরের আয়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে কেউ কোনো হালালকে নিজের ওপর হারাম করার শপথ করলে অবশ্যই তাকে সে শপথ ভাঙতে হবে। সে শপথ ভাঙার কাফফারা আদায় করে আল্লাহর আরোপ করা হালালকে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের শপথ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, আল্লাহ তোমাদের সহায়। আর তিনি সর্বজ্ঞ, তত্ত্বজ্ঞানী। (আয়াত: ২)
জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে রক্ষা করা ইমানদার পুরুষের দায়িত্ব। এই সুরায় আছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যার নিয়ন্ত্রণভার অর্পিত আছে নির্মম হৃদয় কঠোর স্বভাব ফেরেশতাদের ওপর, যারা আল্লাহ তাদেরকে যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না ও যা আদেশ করা হয়। তা-ই করে।’ (আয়াত: ৬)
আসিয়া বিনতে মুজাহিম ছিলেন প্রাচীন মিসরে ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন। এক আল্লাহ্র ওপর ছিল তাঁর বিশ্বাস। মানুষের প্রতি ছিলেন দয়ালু ও সহানুভূতিশীল। তাঁর স্বামী ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করত। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে, এ তথ্য জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে চাপ দেন। আসিয়া অটল। ফেরাউন তখন আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্তরা তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। ক্ষতবিক্ষত করা হয় তাঁকে। তবু তিনি ইমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে তিনি ইমান রক্ষা করেন। তিনি আল্লাহর প্রতিবেশী হওয়ার আকুলতা ব্যক্ত করেন।
তাঁর প্রার্থনার কথা সুরায় আছে এভাবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তোমার কাছে জান্নাতে আমার জন্য একটা ঘর তৈরি করো, আমাকে উদ্ধার করো ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে, আর উদ্ধার করো সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায় থেকে।’ (আয়াত: ১১)
সুরার শেষে ফেরাউনের স্ত্রী ছাড়াও আরেকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি হজরত নুহ (আ.)–এর অবিশ্বাসী স্ত্রী। বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য নুহের ও লুতের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত উপস্থিত করেছেন। ওরা ছিল আমার দুই সৎ কর্মপরায়ণ দাসের অধীন। কিন্তু ওরা তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। তাই নুহ ও লুত তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারল না। আর ওদেরকে বলা হলো, যারা জাহান্নানে ঢুকবে, তাদের সঙ্গে তোমরাও সেখানে ঢোকো।’ (আয়াত: ১০, সুরা তাহরিম, কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)