পবিত্র কোরআন শুনে একদল জিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন
সুরা জিন পবিত্র কোরআনের ৭২তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এর ২ রুকু, ২৮ আয়াত। মুহাম্মদ (সা.)-এর সামনে উপস্থিত একদল জিন পবিত্র কোরআন শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
সুরাটিতে জিন জাতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ সুরার কেন্দ্রীয় বিষয় এই বার্তা দেওয়া যে মানুষের মতো জিনেরাও শরিয়ত পালনে শামিল রয়েছে।
এ সুরায় বলা হয়েছে, জিনেরা মানুষের মতোই বিভিন্ন বিধান পালনের জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত। তাদের মধ্যে বিশ্বাসী–অবিশ্বাসী, সৎ–অসৎ—সবই আছে। জিনদের একটি দল কোরআন শুনেছে এবং এর ফলে প্রভাবিত হয়েছে।
রাসুল (সা.)–এর নবুয়ত পাওয়ার পর জিনেরা বিশ্বজগতের ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করে। একসময় তারা আসমান পর্যন্ত যেতে পারত, কোনো বাধা দেওয়া হতো না। অথচ তারা দেখতে পেল, আসমানে যাওয়ার চেষ্টা করলে উল্কাপিণ্ড দিয়ে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হয়। জিনেরা এ পরিবর্তনের কারণ জানতে কৌতূহলী হয়ে ওঠে। এর রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তাদের একটি দল বিশ্ব পরিভ্রমণে বের হয়। একদিন রাসুল (সা.) কিছু সাহাবির সঙ্গে তায়েফের পথে উকাজ বাজারে যান। নাখলা নামে একটি স্থানে তিনি ফজর নামাজ আদায় করছিলেন। জিনদের সেই দলটি তখন সে পথ দিয়ে যাচ্ছিল। কোরআন শুনে তারা বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তনের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারল। তাদের অন্তর নরম হয়ে গেল। কোরআনের সত্যতার সামনে তারা মাথা ঝুঁকিয়ে দিল। (আয়াত: ১-২)
তারা কেবল নিজেরাই ইমান আনেনি, ফিরে গিয়ে নিজেদের সম্প্রদায়ের সদস্যদের ইমানের দাওয়াত দিয়েছে। তাদের সামনে আল্লাহর বর্ণনা দিয়েছে। তারা এ কথাও স্বীকার করেছে যে তারা সবাই একই বিশ্বাস পালন করে না। কেউ বিশ্বাসী, আবার কেউ অবিশ্বাসী। কেউ জান্নাতি, কেউ জাহান্নামি। (আয়াত: ১৪-১৭)
জিনদের প্রসঙ্গে এ সুরায় বলা হয়েছে যে রাসুল (সা.) আল্লাহর হুকুম মোতাবেক মানুষকে ইমান ও তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন।
কোরআনের প্রতি জিনদের ইমান আনা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নবুয়ত লাভ করার পর জিনদের অবস্থা। সব মসজিদ আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন না। আর কিয়ামতের সময়ও আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।
ইসলামের দাওয়াত সবার জন্য। পৃথিবীর প্রতিটি জাতির জন্য, মানুষ জাতির জন্য যেমন; জিন জাতির জন্যও। (আয়াত: ১-৫)
জিনের সাহায্য গ্রহণ করা অনেক বড় বড় ক্ষতির কারণ। (আয়াত: ৬)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ব্যাপারে কথা বলার সময় আদব ও শিষ্টাচারের দিকে পূর্ণ খেয়াল রাখা ফরজ। (আয়াত: ১০)
আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সঙ্গে আর কাউকে ডেকো না, যেসব ঘরে কেবল আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা হয়।’
আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘বলো, আমি প্রত্যাদেশের মাধ্যমে জেনেছি যে জিনদের একটি দল কোরআন শুনেছে এবং তাদের সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কোরআন শুনেছি, যা সঠিক পথনির্দেশ দেয়। তাই আমরা এতে বিশ্বাস করেছি। আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে কাউকে শরিক করব না।’ (আয়াত: ১-২)
রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে মানবজাতির জন্য যেমন, জিন জাতির জন্যও তেমনই রাসুল হিসেবে পাঠানো হয়েছে। কুরাইশরা যেন জেনে নেয়, জিনরা উদ্ধত ও অবাধ্য হওয়া সত্ত্বেও যখন কোরআন শুনেছে, তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ইমান এনেছে।
ইসলামি শরিয়াহ কেবল মানুষের জন্য নয়, জিনরা আমাদের কথা শোনে, আমাদের ভাষা বুঝতে পারে। তাই জিনদের জন্যও। জিনরাও স্বজাতিকে দীনের পথে আহ্বান করে।