হজের উদ্দেশ্য উপলব্ধির জন্য যে ইতিহাস হাজিদের জানা দরকার

ফাইল ছবি

ঐতিহাসিক স্মৃতিময় ইবাদত হজ। আদি পিতা হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত বহু নবী–রাসুলের স্মৃতিধন্য এই হজ। তাই হজের প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতায় সে স্মৃতি মানসপটে জাগ্রত হলে হজের উদ্দেশ্য অনুধাবন সম্ভব হবে এবং লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে।

হারাম শরিফ, মসজিদুল হারাম ও বায়তুল্লাহ: হজের সম্পাদন এলাকাকে হারাম শরিফ বলে। হারাম শরিফের সীমা বায়তুল্লাহর পূর্বে জেরুজালেমের পথে ৯ মাইল, পশ্চিমে জেদ্দার পথে শুআইদিয়া পর্যন্ত ১০ মাইল, উত্তরে মদিনা শরিফের পথে ৫ মাইল এবং দক্ষিণে তায়েফের পথে ৭ মাইল।

হারামের প্রাণকেন্দ্র হলো মসজিদুল হারাম, এর কেন্দ্রস্থলে কাবা শরিফ অবস্থিত। হজরত আদম (আ.)–এর সৃষ্টি থেকে কাবাগৃহের সৃষ্টি। হজরত নুহ (আ.)–এর সময় মহাপ্লাবনের পর হজরত ইব্রাহিম (আ.) পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে নিয়ে এ ঘর সংস্কার করেন। এযাবৎ কাবা শরিফ ১২ বার সংস্কার করা হয়েছে।

কাবা শরিফের উত্তর পাশের অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালঘেরা স্থানকে ‘হাতিম’ বলা হয়। এই স্থানটুকু পূর্বে কাবাঘরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখানে নামাজ পড়া মানে কাবাঘরের ভেতরে নামাজ পড়া। দোয়া কবুলের জন্য হাতিম সর্বোত্তম স্থান

হাতিম: কাবা শরিফের উত্তর পাশের অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালঘেরা স্থানকে ‘হাতিম’ বলা হয়। এই স্থানটুকু পূর্বে কাবাঘরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখানে নামাজ পড়া মানে কাবাঘরের ভেতরে নামাজ পড়া। দোয়া কবুলের জন্য হাতিম সর্বোত্তম স্থান।

হাজরে আসওয়াদ: হাজরে আসওয়াদ মানে কালো পাথর, এটি একটি স্বর্গীয় পাথর। হজরত আদম (আ.)–এর সময় এটি আনীত হয়। এই পবিত্র প্রস্তরখণ্ডকে নবী করিম (সা.) অত্যন্ত বিনয় ও মহব্বতের সঙ্গে চুম্বন করতেন।

মুলতাজিম: হাজরে আসওয়াদ ও কাবাঘরের দরজার মধ্যবর্তী স্থানটুকু মুলতাজিম নামে পরিচিত। এখানে দোয়া কবুল হয়।

মাকামে ইব্রাহিম: কাবা শরিফের পূর্ব দিকে মাকামে ইব্রাহিমে যে প্রস্তরখণ্ড রক্ষিত আছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) কাবাঘরের প্রাচীর গাঁথতেন। এই পবিত্র স্থানের পেছনে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক প্রকার তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। এই নামাজ ওয়াজিব। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৫)

সাফা–মারওয়া: মসজিদুল হারাম শরিফ–সংলগ্ন পূর্ব দিকে সাফা ও মারওয়া পাহাড় অবস্থিত। এই দুই পাহাড়ের মধ্যস্থলে নির্বাসিত বিবি হাজেরা (আ.) তাঁর শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)–এর পানীয়ের অনুসন্ধানে ছোটাছুটি করছিলেন। সেই স্মৃতি রক্ষার্থে হাজিদের এই দুই পাহাড়ের মধ্যে সাত চক্কর দৌড়াদৌড়িকে সাঈ বলা হয়। সাঈ করা ওয়াজিব। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৮)

আরাফাত: আরাফাত একটি প্রশস্ত ময়দান। এর আয়তন ৩১ বর্গকিলোমিটার। খানায়ে কাবা থেকে আরাফাত ১২ কিলোমিটার এবং মিনা থেকে ৯ কিলোমিটার। ৯ জিলহজ হাজিদের আরাফাত ময়দানে অবস্থান করতে হয়।

‘আরাফাত’ মানে পরিচয়। আরাফাত ময়দানে হজরত বাবা আদম (আ.)–এর সঙ্গে হজরত মা হাওয়া (আ.)–এর পুনর্মিলন হয় এবং তাঁরা স্বীয় ভুলের জন্য তথায় আল্লাহ তাআলার দরবারে মোনাজাত করেন এবং তাঁদের মোনাজাত কবুল হয়। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩৭; সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ২৩)

মিনা: আল্লাহ তাআলার আদেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)–কে যে স্থানে কোরবানির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই স্থানের নাম মিনা। মক্কা শরিফ থেকে মিনা পাঁচ কিলোমিটার। মিনা প্রান্তরে হজের আগের দিন এবং হজের পর তিন দিন তাঁবুতে অবস্থান করতে হয় এবং এখানেই কোরবানি করতে হয়। (সুরা-৩৭ ছফফাত, আয়াত: ৯৯-১১১)

জুমরা বা জামারাত: মিনার পাশেই তিনটি জুমরা বা স্তম্ভ (বহুবচন জামারাত) অবস্থিত। এগুলো ছোট শয়তান (জুমরায়ে উলা), মেজ শয়তান (জুমরায়ে উস্ত), বড় শয়তান (জুমরায়ে আকাবা) নামে পরিচিত। হজরত ইসমাইল (আ.)–কে কোরবানির পথে এই স্থানে শয়তান বাধা সৃষ্টি করেছিল এবং তিনি পাথর মেরে শয়তানকে তাড়িয়ে ছিলেন। এর স্মরণে এখানে কঙ্কর মারতে হয়।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    [email protected]