সামনের দুটি দাঁত নেই এমন লোকদের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন ছিলেন তিনি
ওহুদ যুদ্ধে রাসুল (সা.)–এর দাঁত ভেঙে যায়। লৌহবর্মের দুটি পেরেক তাঁর মুখে বিঁধে গিয়েছিল। আবু বকর (রা.) সেগুলো তোলার জন্য রাসুল (সা.)–এর কাছে আসছিলেন। আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) তাঁকে বললেন, হে আবু বকর (রা.), দয়া করে আমাকে এ কাজটি করতে দিন। আবু বকর (রা.) আবু উবাইদা (রা.)-কে অনুমতি দিলেন। হাত দিয়ে পেরেক তুললে বারবার পিছলে যেতে পারে, তাতে রাসুল (সা.)–এর কষ্ট হবে। তাই তিনি তাঁর দাঁত দিয়ে পেরেক তোলার সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রথম পেরেক আবু উবাইদা (রা.) নিজের সামনের একটি দাঁত ও নিচের একটি দাঁতের সাহায্যে তুলে নিলেন। কিন্তু হারালেন নিজের সামনের একটি দাঁত। আর দ্বিতীয় পেরেকটিও সামনের অপর একটি দাঁত ও নিচের একটি দাঁত দিয়ে টান দিয়ে খুললেন। এবারও হারালেন সামনের আরেকটি দাঁত।
আবু বকর (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম, সামনের দুটি দাঁত নেই এমন লোকদের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন হলেন আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.)।
একবার খ্রিষ্টানদের একটি প্রতিনিধিদল রাসুল (সা.)–এর দরবারে হাজির হয়ে বলল, ‘আপনার সঙ্গীদের মধ্য থেকে আপনার মনোনীত কাউকে আমাদের সঙ্গে পাঠান, যিনি আমাদের কিছু বিতর্কিত সম্পদের ফয়সালা করে দেবেন।’
রাসুল (সা.) জবাবে বললেন, ‘আমি তোমাদের সঙ্গে একজন আমানতদার ও দৃঢ়চেতা ব্যক্তিকে পাঠাব।’ নবী করিম (সা.)–এর কথা শুনে সাহাবিদের প্রত্যেকে কামনা করছিলেন যেন তাঁকে পাঠানো হয়। হজরত উমর (রা.) বলেন, ‘জীবনে শুধু সেদিনই আমি নেতৃত্বের জন্য লোভ করেছিলাম। এর একমাত্র কারণ ছিল, আমি যেন হতে পারি রাসুল (সা.)–এর প্রশংসার পাত্রটি।’
উমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সঙ্গে জোহরের নামাজ শেষ করে ডানে–বাঁয়ে তাকাতে লাগলেন। আর আমিও তাঁর নজরে পড়ার জন্য আমার গলা সামান্য উঁচু করতে লাগলাম। রাসুল (সা.) তাঁর চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে একসময় আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.)–কে দেখতে পেলেন। তাঁকে ডেকে তিনি বললেন, ‘তুমি তাদের সঙ্গে গিয়ে সত্য আর ন্যায়ের ভিত্তিতে তাদের বিতর্কিত বিষয়টির ফয়সালা করে দাও।’ তখন আমি মনে মনে বললাম, আবু উবাইদা (রা.) মর্যাদাটি ছিনিয়ে নিয়ে গেল।
হজরত আবু বকর (রা.) খলিফা হওয়ার পর আবু উবাইদা (রা.) তাঁর উপদেষ্টা ও সাহায্যকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। হিজরি ১৩ সনে আবু বকর (রা.) সিরিয়ায় অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। আবু উবাইদাকে সিরিয়ার হিমস, ইয়াযিদ বিন আবু সুফিয়ানকে সিরিয়ার দামেস্ক, শুরাহবিলকে জর্দান এবং আমর ইবনুল আসকে ফিলিস্তিনে যাত্রার নির্দেশ দেন। সম্মিলিত বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিয়োগ করেন আবু উবাইদাকে। দামেস্ক, হিমস, লাজোকিয়া প্রভৃতি শহরে বিজয় আসে আবু উবাইদা (রা.)–এর হাতে।