সুরা আহকাফে কৃপণতা নিয়ে সতর্কতা

ছবি: ফ্রি পিক

সুরা আহকাফ পবিত্র কোরআনের ৪৬তম সুরা। আল্লাহর কাছ থেকে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার ঘোষণা করে তওহিদ বা একত্ববাদের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এই সুরায় শিরক বা অংশীবাদের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে।

সুরাটিতে বলা হয়েছে, ‘এমন লোক আছে যে তার মাতাপিতাকে বলে, তোমরা কি আমাকে ভয় দেখাতে চাও যে, আমাকে আবার ওঠানো হবে, যদিও আমার পূর্বে বহু পুরুষ শেষ হয়েছে আর তাদেরকে আবার ওঠানো হয়নি?' তখন তার মাতাপিতা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলে, দুর্ভোগ তোমার জন্য, বিশ্বাস করো আল্লাহর কথাই সত্য। কিন্তু সে বলে, এ তো সেকালের উপকথা ছাড়া কিছুই নয়।’ (আয়াত: ১৭)

বান্দাদের আসমান ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী আর উভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুই আমি যথাযথভাবে নির্দিষ্টকালের জন্য সৃষ্টি করেছি; কিন্তু অবিশ্বাসীরা ওদেরকে যে-বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে তা অবজ্ঞাভরে অস্বীকার করে।’

আরও পড়ুন

বলো, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তাদের কথা ভেবে দেখেছ কি? তারা পৃথিবীতে কিছু সৃষ্টি ক'রে থাকলে আমাকে তা দেখাও। অথবা আকাশের সৃষ্টিতে কি ওদের কোনো অংশ আছে। (যদি থাকে) এর সমর্থনে পূর্ববর্তী কোনো কিতাব বা ঐতিহ্যগত কোনো জ্ঞান থাকলে তোমরা তা উপস্থিত করো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (আয়াত: ৩–৪)

আদ জাতির আল্লাহর নির্দেশ প্রত্যাখ্যান এবং কুফরি করার বিবরণও এতে এসেছে, ‘স্মরণ করো আ'দদের ভাই হুদের কথা, যার আগে ও পরেও সতর্ককারীরা এসেছিল, সে তার আহকাফবাসী সম্প্রদায়কে এ ব'লে সতর্ক করেছিল, আল্লাহ্ ছাড়া কারও উপাসনা কোরো না। তোমাদের জন্য আমার মহাদিনের শাস্তির ভয় হয়।

‘ওরা বলেছিল, তুমি কি আমাদের দেবদেবীদের পূজা থেকে আমাদেরকে বিরত করতে এসেছ? তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ, তা নিয়ে এসো।

‘সে বলল, এর জ্ঞান তো কেবল আল্লাহরই, আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি কেবল তা-ই তোমাদের কাছে প্রচার করি। আমি দেখছি, তোমরা তো এক অবুঝ সম্প্রদায়। তারপর যখন ওরা দেখল এক মেঘ তাদের উপত্যকার কাছে এসে পড়ছে তখন ওরা বলতে লাগল, এ মেঘ আমাদের বৃষ্টি দেবে। হুদ বলল, এই তো সেই জিনিস যা তোমরা তাড়াতাড়ি আনতে চেয়েছ, এ তো এক দারুন শাস্তির ঝড় বয়ে নিয়ে আসছে। আল্লাহর নির্দেশে এ সবকিছু ধ্বংস দেবে। তারপর ওদের পরিণাম এই হলো যে, ওদের বসতিগুলো ছাড়া কিছুই রইল না। এভাবে আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়ে থাকি। আমি ওদেরকে যে-প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম, তোমাদেরকে তা দিইনি। আমি ওদেরকে দিয়েছিলাম কান, চোখ ও হৃদয়, কিন্তু ওদের কান, চোখ ও হৃদয় ওদের কোনো কাজে আসেনি; কেননা ওরা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছিল। যা নিয়ে ওরা ঠাট্টাবিদ্রূপ করত তা-ই ওদের ঘিরে ফেলল।’ (আয়াত: ২১–২৬)

আরও পড়ুন

একদল জিন আল্লাহর নির্দেশ পালন করার এবং স্বজাতিকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়ার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘আর যখন আমি একদল জিনকে তোমার প্রতি আকৃষ্ট করলাম ওরা কোরানের আবৃত্তি শুনে কাছে এসে একে অপরকে বলতে লাগল, চুপ করে শোনো। যখন কোরানের আবৃত্তি শেষ হলো ওরা ওদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল সতর্ককারীরূপে। ওরা বলেছিল, হে আমাদের সম্প্রদায় আমরা এমন এক কিতাবের আবৃত্তি শুনেছি যা মুসার পরে অবতীর্ণ হয়েছে। এ এর আগের কিতাবকে সমর্থন করে, আর সত্য ও সরল পথের দিকে নির্দেশন দেয়। হে আমাদের সম্প্রদায়! আল্লাহর দিকে যে ডাকে তার ডাকে সাড়া দাও তার ওপর বিশ্বাস করো, আল্লাহ্ তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন। নিদারুণ শাস্তি থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করবেন। আল্লাহর দিকে যে ডাকে তার ডাকে কেউ যদি সাড়া না দেয় তবে তাতে আল্লাহ্র অভিপ্রায় ব্যর্থ হবে না। আর আল্লাহ্র সামনে কেউ তাকে সাহায্যও করবে না। সে তো সুস্পস্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে।’ (আয়াত: ২৯–৩২)

আরও পড়ুন

পিতামাতার ব্যাপারে, বিশেষ করে মাকে নিয়ে উপদেশ দেওয়া হয়েছে, ‘আমি মানুষকে তার মাতাপিতার সাথে ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। কষ্ট করে তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করেছে, কষ্ট করে তাকে প্রসব করেছে, তার দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত ত্রিশ মাস কষ্ট করে তাকে বহন করেছে। ক্রমে সে যখন সমর্থ হয় ও চল্লিশ বছরে পৌঁছে তখন বলে, 'হে আমার প্রতিপালক। তুমি আমাকে শক্তি দাও যাতে আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমাকে ও আমার মাতাপিতাকে তুমি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য, আর যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর। আমার সন্তানসন্ততিদেরকে সৎকর্মপরায়ণ করো, আমি তোমারই দিকে মুখ ফেরালাম ও তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করলাম।’ (আয়াত: ১৫)

আরও পড়ুন