তাহাজ্জুদের নামাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগেই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর তাহাজ্জুদ নামাজ আবশ্যক ছিল। তিনি জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত হননি। তাঁর উম্মতেরা এ নামাজ আদায় করলে অশেষ পুণ্য লাভ করবেন, কিন্তু আদায় করতে না পারলে কোনো গুনাহ হবে না। কোরআন শরিফে আছে, ‘ওহে, তুমি যে কিনা নিজেকে চাদরে জড়িয়ে রেখেছ! তুমি রাত্রিতে প্রার্থনার জন্য দাঁড়াও, রাত্রির কিছু অংশ বাদ দিয়ে, অর্ধেক অথবা তার কিছু কম বা বেশি। তুমি কোরান আবৃত্তি করো ধীরে ধীরে, স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল: ১-৪, কোরানশরিফ সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০২০)
আরবি ‘তাহাজ্জুদ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ রাত জাগা। শরিয়তের পরিভাষায় রাত দ্বিপ্রহরের পর ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে নামাজ আদায় করা হয়, তা-ই ‘সালাতুত তাহাজ্জুদ’ বা তাহাজ্জুদ নামাজ।
তাহাজ্জুদ কখন পড়তে হবে? কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক তো জানেন তুমি কখনো রাত্রির প্রায় তিনের দুই ভাগ, কখনো অর্ধেক, আবার কখনো তিনের এক ভাগ জেগে থাকো। আর তোমার সঙ্গীদের একটি দলও জেগে থাকে। আল্লাহই দিন ও রাতের সঠিক হিসেব রাখেন। তিনি জানেন যে তোমরা এর সঠিক হিসেব রাখতে পারবে না। সে জন্য আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরবশ। তাই কোরানের যতটুকু আবৃত্তি করা তোমার পক্ষে সহজ তোমরা ততটুকু আবৃত্তি করো। আল্লাহ তো জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে সফরে যাবে, আর কেউ আল্লাহর পথে সংগ্রামে ব্যস্ত থাকবে; কাজেই কোরান থেকে যতটুকু আবৃত্তি করা তোমাদের জন্য সহজ তোমরা ততটুকুই আবৃত্তি করো। তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও আর আল্লাহকে দাও উত্তম ঋণ। তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্য তোমরা যা-কিছু ভালো আগে পাঠাবে, পরিবর্তে তোমরা তার চেয়ে আরও ভালো ও বড় পুরস্কার পাবে আল্লাহর কাছ থেকে। আর তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো আল্লাহর কাছে। আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূত্র: সুরা মুজ্জাম্মিল ২০, কোরানশরিফ সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০২০)
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক তো জানেন তুমি কখনো রাত্রির প্রায় তিনের দুই ভাগ, কখনো অর্ধেক, আবার কখনো তিনের এক ভাগ জেগে থাকো। আর তোমার সঙ্গীদের একটি দলও জেগে থাকে। আল্লাহই দিন ও রাতের সঠিক হিসেব রাখেন। তিনি জানেন যে তোমরা এর সঠিক হিসেব রাখতে পারবে না। সে জন্য আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরবশ। তাই কোরানের যতটুকু আবৃত্তি করা তোমার পক্ষে সহজ তোমরা ততটুকু আবৃত্তি করো। আল্লাহ তো জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে সফরে যাবে, আর কেউ আল্লাহর পথে সংগ্রামে ব্যস্ত থাকবে; কাজেই কোরান থেকে যতটুকু আবৃত্তি করা তোমাদের জন্য সহজ তোমরা ততটুকুই আবৃত্তি করো।
মধ্যরাতে যখন লোকেরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, পুণ্যার্থী তখন ঘুম থেকে জেগে ইবাদত-বন্দেগি করেন। সুবহে সাদিকের আগপর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। সুবহে সাদিক হয়ে গেলে এ নামাজ আর পড়া যায় না। যদি রাত দ্বিপ্রহরের পর ঘুম থেকে জেগে ওঠার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে এশার নামাজের পর এবং বিতরের আগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে হয়। তবে রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে তাতে সওয়াব বেশি।
তাহাজ্জুদ নামাজ চার রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজ কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত, কখনো ১২ রাকাত পড়তেন। কেউ যদি এ নামাজ ২ রাকাত আদায় করেন, তাহলেও তাঁর তাহাজ্জুদ আদায় হবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।’
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কালে পবিত্র কোরআনের আয়াত বেশি বেশি তিলাওয়াত করা উত্তম। যদি দীর্ঘ সুরা মুখস্থ থাকে, তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজে দীর্ঘ সুরা তিলাওয়াত করা সংগত। ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা ইখলাস ১২ বার, দ্বিতীয় রাকাতে ১১ বার, তৃতীয় রাকাতে ১০ বার, চতুর্থ রাকাতে ৯ বার—এভাবে দ্বাদশ রাকাতে একবার পড়া যায়। আবার প্রত্যেক রাকাতে সুরা ইখলাস ৩ বার অথবা ১ বার হিসেবেও পড়া যায়। আবার সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াতুল কুরসি এবং সুরা আল-ইনশিরাহও পড়া যায়।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর রহমত নাজিল করেন, যিনি রাতে নিদ্রা থেকে জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন এবং তাঁর স্ত্রীকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে দেন। অতঃপর তিনি (তাঁর স্ত্রী) তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। এমনকি যদি তিনি (স্ত্রী) ঘুম থেকে জেগে উঠতে না চান, তাহলে তাঁর মুখে পানির ছিটা দিন।’ (আবু দাউদ ও নাসাঈ)
গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সব নফল ইবাদতের চেয়ে বেশি। এটি আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। এ জন্য আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর এ নামাজ ফরজ করে দিয়েছিলেন।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর রহমত নাজিল করেন, যিনি রাতে নিদ্রা থেকে জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন এবং তাঁর স্ত্রীকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে দেন। অতঃপর তিনি (তাঁর স্ত্রী) তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। এমনকি যদি তিনি (স্ত্রী) ঘুম থেকে জেগে উঠতে না চান, তাহলে তাঁর মুখে পানির ছিটা দিন।’ (আবু দাউদ ও নাসাঈ)
তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো বিনা অজুহাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ছাড়তেন না।
অবশ্য সারা রাত জেগে নামাজ পড়ার পর ভোররাতে বিশ্রাম করতে গিয়ে ফজরের নামাজ ছুটে যাওয়া উচিত নয়। কারণ, ফজরের জামাতের গুরুত্ব অনেক বেশি।