ইসলাম ধর্মের প্রথম মুয়াজ্জিন

আজান দেওয়ার রীতি প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম হিজরিতে। রাসুল (সা.) আজান দেওয়ার জন্য প্রথম মুয়াজ্জিন হিসেবে বেছে নেন হজরত বেলাল ইবনে রাবাহ (রা.)–কে। বেলাল (রা.)–এর কণ্ঠস্বর ছিল সুমধুর। মদিনাবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন তাঁর আজান শোনার জন্য। ইসলামের উষালগ্নে চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও যাঁরা ইমানের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিলেন এবং প্রকাশ্যে তা ঘোষণা দেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন, হজরত বেলাল (রা.) তাঁদের একজন।

যুদ্ধ ও ভ্রমণের সময় হজরত বেলাল (রা.) রাসুল (সা.)–এর সঙ্গী হতেন এবং যথাসময়ে আজান দিতেন। মক্কা বিজয়ের দিনে বেলাল (রা.) কাবাঘরের ওপর উঠে পড়েন এবং উচ্চস্বরে আজান দেন। মহানবী (সা.)–এর জীবদ্দশায় নির্মিত মসজিদ আল কুবা ও মসজিদে নববি গড়ে তোলার সময় বেলাল (রা.) সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

আরও পড়ুন

বদর যুদ্ধের ময়দানে কুরাইশদের পক্ষে ছিলেন হজরত বেলাল (রা.)–এর একসময়ের অত্যাচারী মনিব উমাইয়া ইবনে খালফ। বেলাল (রা.)–এর তরবারির আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়।

রাসুল (সা.)–এর সেবার জন্য তিনি উদ্‌গ্রীব থাকতেন। শত প্রয়োজন ও দারিদ্র্য সত্ত্বেও হাতে কিছু এলে তার একাংশ তিনি রাসুল (সা.)–কে উপহার দিতেন।

রাসুল (সা.) পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর প্রিয় নবীর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো তাঁকে বেদনার্ত করত। তাঁর পক্ষে রাসুলবিহীন মদিনায় থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ল। মদিনা ছেড়ে তিনি সিরিয়ার দামেস্কে চলে গেলেন।

আরও পড়ুন

মহানবী (সা.)–এর মৃত্যুর পর তাঁর খুব কষ্ট হতো। তিনি আজান দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। একসঙ্গে সিরিয়া সফরের সময় হজরত উমর (রা.) বেলাল (রা.)-কে আজান দিতে অনুরোধ করেন। তাঁর অনুরোধে বেলাল (রা.) আজান দেন। সেই হৃদয়গ্রাহী আজান শুনে উপস্থিত মানুষের চোখ অশ্রুতে ভরে গিয়ে গভীর আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। হজরত উমর (রা.) আবেগে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

হজরত বেলাল (রা.) এক রাতে রাসুল (সা.)-কে স্বপ্ন দেখে সিরিয়া থেকে মদিনায় রাসুল (সা.)–এর কবরে ছুটে যান। গিয়ে কান্নায় ছটফট করতে থাকেন। এক পর্যায়ে রাসুল (সা.)–এর দুই নাতি হাসান (রা.) ও হুসাইনকে (রা.) জড়িয়ে ধরে আদর করতে শুরু করেন।

আরও পড়ুন

রাসুল (সা.)-এর দুই নাতি সেদিন ভোরে ফজরের আজান দেওয়ার জন্য বেলাল (রা.)–কে অনুরোধ করেন। তাঁদের অনুরোধে বেলাল (রা.) সুবহে সাদিকের সময় মসজিদে নববির ছাদে দাঁড়িয়ে তাঁর সুরেলা কণ্ঠে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি তুললেন। আর ধ্বনি অলিতে-গলিতে প্রতিধ্বনিত হলো। আবেগবিহ্বল মানুষেরাও তকবির তুলে সে দিন আকাশ–বাতাস মুখর করে তুলল।

আরও পড়ুন