যে দানে ত্যাগের অনুভূতি হয়, সেটিই প্রকৃত দান
মদিনার আনসার সাহাবিদের মধ্যে হজরত আবু তালহা (রা.) ছিলেন ধনী। তিনি থাকতেন মসজিদে কুবার পাশের এলাকায়। বাইরুহা নামে সেখানে তাঁর সুন্দর একটি বাগান ছিল। সেখানে ছিল অসংখ্য খেজুরগাছ। এক সময়ে পবিত্র কোরআনে সুরা আল ইমরানের ৯২ নম্বর আয়াত নাজিল হলো। সেই আয়াতে আল্লাহ বললেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের ভালোবাসার জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করবে, তোমরা পুণ্য লাভ করতে পারবে না। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, আল্লাহ তো সে সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন।’
আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর আবু তালহা (রা.) ছুটে গেলেন নবী করিম (সা.)–এর কাছে। বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ তো আমাদের নিজেদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস থেকে ব্যয় করার আদেশ দিয়েছেন।’ তিনি আরও বললেন, ‘বাইরুহা আমার সবচেয়ে প্রিয় বাগান। আজ থেকে এ বাগানের মালিক আপনি। হে আল্লাহর রাসুল। আপনি যেভাবে চান, যেভাবে আল্লাহ হুকুম করেন, আপনি এ বাগান এবং বাগানের সম্পদকে সেভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।’
রাসুল (সা.) আবু তালহা (রা.)–এর কথা শুনে বললেন, ‘তুমি এই বাগানকে তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করো।’
আবু তালহা (রা.) রাসুল (সা.)–এর কথা মেনে নিলেন। বাগানটিকে তিনি তিন ভাগ করলেন। একটি অংশ পরিবারের জন্য, একটি আত্মীয়স্বজনের জন্য, আর বড় অংশটি নিজের গোত্রের জন্য।
হজরত আবু তালহা (রা.)–র এই ঘটনার তিনটি তাৎপর্য: ১. সাহাবিরা তাঁদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস দান করতে উৎসুক ছিলেন। ২. রাসুল (সা.) চাইতেন না তাঁর সাহাবিরা দারিদ্র্যের মধ্যে দিনযাপন করুক। ৩. কাউকে দান করতে হলে নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস দান করতে হবে।
দান করতে গিয়ে অনেকেই সবচেয়ে পুরোনো বা পরিত্যাজ্য জিনিস দান করেন। এটি প্রকৃত দানশীলতার পরিচয় নয়। দান তত উত্তম, যা দান করতে গিয়ে ত্যাগের অনুভূতি তীব্রতর হয়।