জীবনে কল্যাণ লাভের উপায়

ইসলামে দানকে কল্যাণ লাভের উপায় হিসেবে দেখা হয়। সাহাবিরা যখন বাধ্য হয়ে মদিনায় হিজরত করলেন, তখন তাঁরা সবকিছু মক্কায় ফেলে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকের স্ত্রী-পুত্র, সম্পদ, ঘরবাড়ি সবকিছু কাফেরদের দখলে চলে গিয়েছিল। সাহাবিরা মদিনায় এসে দারিদ্র্যের জীবন শুরু করলেন। এ সময় মদিনার আনসার সাহাবিরা মুহাজিরদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁরা তাঁদের ঘরে মুহাজির সাহাবিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, তাঁদের কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

এরপর আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করলেন, ‘তোমরা কখনোই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় জিনিস থেকে ব্যয় না কর। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর না কেন, সে ব্যাপারে আল্লাহ জানেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯২)

আরও পড়ুন

মানুষের একটি প্রবণতা হলো, যে জিনিস তার প্রয়োজন নেই, তা থেকে সে দান করে। অনেক সময় সবচেয়ে অপছন্দের জিনিসগুলো দান করার জন্য রাখা হয়। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, দান যদি করতেই হয়, সেটা করতে হবে সবচেয়ে পছন্দের জিনিস থেকে। তাহলে কল্যাণ লাভ করা সম্ভব হবে।

মদিনার এক আনসার সাহাবি এই আয়াত শুনলেন। তাঁর নাম ছিল আবু তালহা (রা.)। তিনি ছিলেন মদিনার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের একজন। তাঁর অসংখ্য তাল ও খেজুরগাছের বাগান ছিল। আবু তালহার বাড়ির পাশেই ছিল বিশাল এক বাগান, যার নাম ছিল বাইরুহা। বাগানটি তাঁর খুব পছন্দের ছিল। এত সুন্দর ও মনোরম বাগান মদিনায় আর দ্বিতীয়টি ছিল কি না সন্দেহ। বাগানে বসলে ছায়ায় শীতলতা অনুভূত হতো। বাগানের পাশে ছিল ঝরনাধারা। সাহাবিরা সেখান থেকে পানি নিতেন। ক্ষুধা পেলে খেজুর খেতেন।

আরও পড়ুন

আবু তালহা (রা.) মহানবী (সা.)-এর কাছে গিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল। আল্লাহ বলেছেন সবচেয়ে প্রিয় জিনিস থেকে দান করতে। আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি হলো আমার এই বাগান। আমি চাই বাগানটি আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিতে। বিনিময়ে আমি শুধু এতটুকু নিশ্চয়তা চাই, আল্লাহ যেন আমাকে উত্তম কিছু দান করেন। আজ থেকে এই বাগানের মালিক আপনি, হে আল্লাহর রাসুল। আপনি যেভাবে চান এই বাগানকে ব্যবহার করতে পারেন।’

মহানবী (সা.) এ কথা শুনে খুব খুশি হলেন, ‘কতই না উত্তম বিনিয়োগ, কতই না উত্তম সিদ্ধান্ত। আবু তালহা, তুমি যা বলেছ, আমি নিজে তার স্বীকৃতি দিচ্ছি। তবে আমার নির্দেশ তুমি বাগানটি তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করো। তাদেরও অধিকার রয়েছে তোমার ওপর।’

আরও পড়ুন

মহানবী (সা.) তাঁর সাহাবিদের ওপর এমন কিছু চাপিয়ে দিতেন না, যা পরবর্তী সময়ে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তিনি আবু তালহা (রা.)-কে পরামর্শ দিলেন, এই বাগান থেকে প্রাপ্ত সম্পদ তিন ভাগে ভাগ করা হোক। এক ভাগ পরিবারের জন্য থাকবে, এক ভাগ তার আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং এক ভাগ থাকবে অভাবী মুসলিমদের জন্য।

আবু তালহা (রা.) মহানবীর এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন। এ সিদ্ধান্তের ফলে একদিকে যেমন তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ লাভ করেছিলেন, পাশাপাশি তাঁর পরিবারের জন্য ব্যয় করতে পেরেছিলেন। হাদিসটি আবু তালহা (রা.)-এর ছেলে হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেছিলেন।

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ

আরও পড়ুন