অজুর প্রয়োজন কেন

কেউ অজু করছেন, কেউ অজুর অপেক্ষায়।

অজু অর্থ পরিচ্ছন্নতা। মুসলমানদের মধ্যে শারীরিক পবিত্রতা লাভের জন্য গোসলের পর অজুর স্থান। পবিত্র কোরআনে বিশেষভাবে নামাজ ও পবিত্র কোরআন পড়ার আগে অজু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়িদা-র ৬ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াও, তখন তোমাদের মুখ ও হাত কনুই পর্যন্ত ধোবে এবং তোমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে নেবে, আর পা গিট পর্যন্ত ধোবে। যদি তোমরা অপবিত্র থাকো তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে।’

শরীর অপবিত্র হওয়ার কারণ হলো পায়খানা-প্রস্রাব করা, বায়ু নিঃসরণ, স্ত্রী সংসর্গ, অচেতন হওয়া বা ঘুমিয়ে পড়া, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। এই অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র অবস্থায় ফিরে আসার জন্য অজুর প্রয়োজন।

অজু তিন প্রকার: ফরজ, ওয়াজিব ও মোস্তাহাব। নামাজের জন্য অজু ফরজ। কাবা শরিফ তাওয়াফের জন্য অজু করা ওয়াজিব। গোসল ও ঘুমানোর আগে অজু করা মোস্তাহাব।

অজু করার নিয়ম হলো, বিসমিল্লাহর সঙ্গে প্রথমে নিয়ত করতে হয়। তারপর ডান হাতের ওপর তিনবার ও বাঁ হাতের ওপর তিনবার পানি ঢেলে ধুতে হবে। আঙুলের ফাঁকে এমনকি আংটির মাঝেও পানি প্রবেশ করাতে হবে। হাতের তালুতে পানি নিয়ে তিনবার গড়গড়ার সঙ্গে কুলি করতে হবে। তারপর ডান হাতে পানি দিয়ে নাকের ছিদ্রে পানি প্রবেশ করিয়ে বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে চেপে তিনবার নাক পরিষ্কার করে নিতে হবে। অতঃপর পুনরায় দুই হাতে পানি ছিটিয়ে তিনবার মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলতে হবে। পরে বাঁ হাতে পানি নিয়ে ডান বাহু কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে এবং একইভাবে ডান হাতে পানি নিয়ে বাঁ বাহু কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে। এরপর ভেজা হাত মাথার ওপর নিয়ে সামনে থেকে পেছনে এবং পেছন থেকে সামনে মাসেহ বা মোছার কাজ করতে হবে। এ সময় মনে মনে কালেমা শাহাদত পড়া যেতে পারে। অতঃপর দুই কানে তর্জনী প্রবেশ করিয়ে এবং কানের পেছনে বৃদ্ধাঙ্গুলি নিয়ে ও তা আগে–পিছে করিয়ে কানের ছিদ্র ও বাইরের অংশ মুছে পরিষ্কার করতে হবে। শেষে বা হাতের তালু দিয়ে ডান পায়ের ওপর, নিচ ও আঙুলের ফাঁক ধুতে হবে এবং একইভাবে ডান হাতের তালু দিয়ে বাঁ পায়ের ওপর, নিচ ও আঙুলের ফাঁক ধুতে হবে। 

কোথাও পানি না পাওয়া গেলে বা অসুস্থতার কারণে কেউ পানি ব্যবহারে অসমর্থ হলে সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে শুকনা মাটি বা বালি ব্যবহার করে পরিচ্ছন্ন হওয়ার বিধান শরিয়তে দেওয়া হয়েছে। একে বলে তায়াম্মুম।

সূত্র: ‘অজু’, যার যা ধর্ম, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪