হজরত নুহ (আ.)–এর সময়ে মহাপ্লাবন
হজরত নুহ (আ.) প্রাচীন নবীদের একজন। কোরআনে হজরত নুহ (আ.)–এর আলোচনা ৪২ জায়গায় এসেছে। মানবজাতিকে এক আল্লাহর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরা শুধু এক আল্লাহর ইবাদত করো এবং আমার কথা মানো। আল্লাহ তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’
আল্লাহ নুহ (আ.)–কে জানিয়ে দিলেন, তোমার জাতির যেসব লোক ইমান এনেছে, তাদের ছাড়া অন্য কেউ আর ইমান আনবে না। এ নিয়ে তুমি কোনো দুঃখ কোরো না। তুমি একটি নৌকা বানাও।
হজরত নুহ (আ.) আল্লাহর আদেশ মেনে একটি বিরাট নৌকা বানাতে শুরু করেন।
হজরত আদম (আ.)–এর সন্তানেরা ধীরে ধীরে আল্লাহর কথা ভুলে যেতে করেছিল। যে মহান আল্লাহ তাদের সৃষ্টি ও প্রতিপালন করেছেন, তাঁর স্মরণ থেকে তারা বিমুখ হতে লাগল।
শয়তানের প্ররোচনায় তারা পৌত্তলিক হয়ে উঠতে শুরু করল। এক আল্লাহকে বাদ দিয়ে কল্পিত দেব-দেবীর উপাসনা করতে লাগল। আল্লাহ অপরিসীম দয়ালু। তাই তিনি মানবজাতির কল্যাণের জন্য হজরত নুহ (আ.)–কে নবী বানিয়ে প্রেরণ করেছিলেন।
কিন্তু লোকেরা হজরত নুহ (আ.)–এর কথায় কর্ণপাত করল না। কিন্তু তিনি মনোবল না হারিয়ে তাদের বোঝাতে লাগলেন, ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয় তিনি বড় ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। ফলে তোমরা ফসল উৎপন্ন করতে পারো। আর সে ফসল দিয়ে তোমরা বড় বড় বাগান সাজাতে পারো। আল্লাহ পানি দিয়ে তোমাদের পৃথিবীতে নদ–নদী তৈরি করে দিয়েছেন। তিনিই তোমাদের সন্তানসন্ততি এবং ধনসম্পদ দান করেন। তোমাদের কী হলো যে তোমরা সে আল্লাহকেই মানছ না! অথচ তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং অবশেষে একদিন তোমরা এ মাটিতেই মিশে যাবে। কিয়ামতের দিন এই মাটি থেকেই তিনি পুনরায় তোমাদেরকে ওঠাবেন। সুতরাং হে লোকেরা! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো।’
এ কথা শুনে তারা বলল, ‘যথেষ্ট হয়েছে। আমাদের সঙ্গে অনেক ঝগড়া করেছ। যদি তুমি তোমার কথায় সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে আনো দেখি সেই আজাব, যার ভয় তুমি আমাদের দেখাচ্ছ!’
নুহ (আ.) বললেন, ‘আল্লাহ যখন চাইবেন আজাব কেবল তখনই আসবে।’
তাঁর স্বজাতির নেতারা নৌকা বানাতে দেখে তাঁকে ঠাট্টা–তামাশা করত। তিনি বলতেন, যখন আল্লাহর প্রতিশ্রুত আজাব আসবে, তখন টের পাবে।
অবশেষে আল্লাহর প্রতিশ্রুত আজাব শুরু হলো। মাটি ফেটে পানি বেরোতে লাগল। আকাশ থেকে নামল ভারী বর্ষণ। আল্লাহ হজরত নুহ (আ.)–কে বললেন সব প্রাণীকে নারী–পুরুষ জোড়ায় জোড়ায় নৌকায় উঠিয়ে নিতে। যারা বিশ্বাসী, হজরত নুহ (আ.) তাদের বললেন, আল্লাহর নাম নিয়ে তোমরা নৌকায় চড়ে বসো।
নৌকা তাদের নিয়ে ভাসতে লাগল।
হজরত নুহ (আ.) তাঁর সন্তানকে বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে নৌকায় চড়ে বসো। অবিশ্বাসীদের সঙ্গে থেকো না।’
ছেলে দম্ভভরে বলল, ‘আমি কোনো পাহাড়ে উঠে পড়ব, তখন এই পানি থেকে মুক্তি পেয়ে যাব।’
হজরত নুহ (আ.) বললেন, ‘আল্লাহর আজাব থেকে তিনি ছাড়া আর কেউ বাঁচাতে পারবেন না।’
তার ছেলে পানিতে ডুবে গেল!
অনেক দিন পর পানির বর্ষণ বন্ধ হলো। হজরত নুহ (আ.)–এর নৌকা জুদি পর্বতে গিয়ে ঠেকল। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ, আমার ছেলেও আমার পরিবারের সদস্য। আর আপনার ওয়াদা নিশ্চয় সত্য। আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমার পরিবারকে বাঁচিয়ে দেবেন, তাহলে আমার ছেলে কেন ডুবে মরল!’
আল্লাহ বললেন, ‘তোমার ছেলে তোমার পরিবারভুক্ত নয়। কেননা তার কাজ ভালো ছিল না। আর এমন ব্যাপারে আমার কাছে আবেদন কোরো না, যে ব্যাপারে তোমার জানা নেই।’
নুহ (আ.) জানতেন না যে তাঁর ছেলে কেনান অবিশ্বাসী ছিল। হজরত নুহ (আ.) আল্লাহর কাছে অনুশোচনা করে তাওবা করলেন। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দিলেন।
এরপর নুহ (আ.)–এর উম্মত দুনিয়ায় বসবাস করতে লাগল। ধীরে ধীরে তাদের সন্তানসন্ততি বৃদ্ধি পেতে লাগল। তারা সবাই আল্লাহর আনুগত্য করে চলল।