সুরা আরাফের সারকথা
জান্নাত আর জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থানের নাম আরাফ। সুরা আরাফ পবিত্র কোরআনের সপ্তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এর ২৪ রুকু, ২০৬ আয়াত। এই সুরায় সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের দুর্দশা, শয়তানের কুপরামর্শের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি ও সত্যাশ্রয়ীদের সমৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনায় নুহ (আ.), হুদ (আ.), সালেহ (আ.), লুত (আ.) ও শোয়াইব (আ.)-এর দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এই সুরায় মুসা (আ.)-এর জীবনীও আলোচিত হয়েছে।
ইবলিসের কাহিনি
মানুষ সৃষ্টির আগে আল্লাহর সৃষ্টিতে ছিল ফেরেশতা ও জিন ছিল। ইবলিস ছিল জিন জাতির সদস্য। আগুনে তৈরি। থাকত ফেরেশতাদের সঙ্গে। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করত। আল্লাহর সৃষ্টিতে তার ইবাদতের আলোচনা হতো।
আল্লাহ এর পর দুনিয়ায় তাঁর প্রতিনিধি বানাতে চাইলেন। মানুষের আদি পিতা, সৃষ্টির প্রথম পুরুষ আদম (আ.)–কে সৃষ্টি করলেন। আল্লাহ ফেরেশতাদের আদেশ করলেন, আদমকে সেজদা করতে। ফেরেশতারা আদেশ পালন করেছিলেন। কিন্তু ফেরেশতাদের দলে থাকা ইবলিস সেজদা করল না।
ইবলিস সেজদা না করে আল্লাহর আদেশের অবাধ্য করেছিল। অহংকার দেখিয়ে সে বলেছিল, ‘আমি আগুনের তৈরি আর আদম মাটির।’ আল্লাহ তখন তাকে জান্নাত থেকে বের করে দিলেন। অবাধ্যতা, অহংকার আর কুযুক্তি তার পতন ডেকে এনেছিল। আল্লাহ বললেন, ‘তুমি এখান থেকে নেমে যাও, এখানে থেকে অহংকার করবে এ হতে পারে না। সুতরাং বের হয়ে যাও, তুমি তো অধমদের একজন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৩)
নামাজের পোশাক
সুরা আরাফে মানুষের পরিধেয় পোশাক সম্পর্কে আল্লাহ তিনবার আলোচনা করেছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় তোমরা সুন্দর পোশাক পরবে, পানাহার করবে কিন্তু অপচয় করবে না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৩১)
মানুষকে নামাজে উত্তম পোশাক পরার নির্দেশ দিয়েছেন। সতর ঢেকে রাখা ফরজ। লজ্জা ইমানের সৌন্দর্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষদের সতর হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং নারীদের সতর মুখমণ্ডল, হাতের তালু এবং পা ছাড়া অবশিষ্ট দেহ।’
ছয় জাতির ধ্বংসের কারণ
সুরা আরাফের ৬৫ থেকে ৮৭ নম্বর আয়াতে নুহ, আদ, সামুদ, লুত, মাদায়েনবাসী ও বনি ইসরাইল—এই ছয় সম্প্রদায়ের অবাধ্য ও গজবে ধ্বংস হওয়ার আলোচনা রয়েছে। ১. কওমে নুহের নবী ছিলেন নুহ (আ.)। মূর্তিপূজা ত্যাগ না করায় ভয়ংকর বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস দিয়ে নুহ (আ.)-এর জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল। ২. আদ জাতির নবী ছিলেন হুদ (আ.)। শক্তি ও ক্ষমতার বাহাদুরি এবং মূর্তিপূজা না ছাড়ায় বিভিন্ন শাস্তি দিয়ে আদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল। ৩. সামুদ জাতির নবী ছিলেন সালেহ (আ.)। আল্লাহর নিদর্শন বিশেষ একটি উট হত্যার কারণে ভূমিকম্প দিয়ে সামুদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়। ৪. কওমে লুতের নবী ছিলেন লুত (আ.)। সমকামিতার অপরাধে ভূমি উল্টে পাথরবৃষ্টি দিয়ে লুত (আ.)-এর জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল। ৫. মাদায়েনবাসীর নবী ছিলেন শোয়াইব (আ.)। তাওহিদে অবিশ্বাস, মাপে কম দেওয়া, সম্পদ আত্মসাৎ, অর্থনৈতিক অসততা ও মানুষকে ধর্ম পালনে বাধা দেওয়ায় ভূমিকম্প দিয়ে মাদায়েন জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল। ৬. বনি ইসরাইলের নবী ছিলেন মুসা (আ.)। নিজের ক্ষমতার প্রতি অন্ধ মোহ, মুসা ও হারুন (আ.)–কে হত্যার পরিকল্পনা করার কারণে ফেরাউন ও তার জাতিকে নীল নদে ডুবিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল।