সুরা ফিলের সারসংক্ষেপ
সুরা ফিল (হাতি) পবিত্র কোরআনের ১০৫ তম সুরা। মক্কায় অবতীর্ণ। ১ রুকু, ৫ আয়াত। ইয়েমেনে খ্রিষ্টান শাসনকর্তা আবরাহা কাবা আক্রমণ করলে আল্লাহ আবাবিল পাখির সাহায্যে কঙ্কর বৃষ্টির দ্বারা তার হস্তীবাহিনীকে ধ্বংস করেন। সুরাটি ভালোভাবে বোঝার জন্য পটভূমি জানা প্রয়োজন। তৎকালীন ইয়েমেন এর খ্রিষ্টান শাসক ছিল আবরাহা। কাবাকে ঘিরে মক্কায় ধর্মীয় কেন্দ্র ও সেই সুবিধায় অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত হওয়ায় আবরহা ঈর্ষায় ফেটে পড়ে। সে কাবার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করার জন্য ইয়েমেনের রাজধানী সানায় একটি বিশাল গির্জা নির্মাণ করেছিল এবং আশা করেছিল মানুষ এখানে আসবে ও নতুন কেন্দ্রে পরিণত হবে ইয়েমেন। কিন্তু এই কাজে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ জন্য সে ক্ষুব্ধ হয়ে কাবা ধ্বংসের উদ্যোগ নেয়। যদিও সে এটাকে ধর্মীয় যুদ্ধ হিসাবে দেখাতে চায় কিন্তু তার মনে ছিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। সে বিশাল বিশাল হাতি (৯-১৩ টি) ও বিপুল সৈন্য (৬০ হাজার) নিয়ে কাবার অভিমুখে রওনা হয়। এটি এত গুরুত্ব পূর্ণ একটা ঘটনা ছিল যে সেই বছরকে হস্তী বাহিনীর বছর নামে অভিহিত করা হয়। তখন কুরাইশরাসহ সকলে এত বড় বাহিনী ও হাতি দেখে ভীত হয়ে দূরে অবস্থান করে।কুরাইশের প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ। আল্লাহর কাছে কাবার মর্যাদা ও সম্মান অনেক বড়! কাবার সঙ্গে জুলুম ও বেয়াদবি করার ইচ্ছা করলেও আল্লাহ তাকে পাকড়াও করেন।
মানুষ কুরাইশদের কাবায় হজের জন্য সমবেত হতো বলে আবরাহা তাদের প্রতি হিংসা কাতর হয়ে পড়েছিল। আর তার পরিণতিও বড় ভয়াবহ হয়েছিল। হিংসার পরিণাম ভয়ংকর হয়। বিশুদ্ধ নিয়ত খুলে দেয় কল্যাণের দ্বার।, আল্লাহ আবরাহা ও তার বাহিনীকে আজাব দিয়ে ধ্বংস করেছিলেন; কিন্তু কুরাইশদের ধ্বংস করেননি; যদিও তারা কাবাকে মূর্তি দিয়ে ভরে ফেলেছিল। কারণ হস্তিবাহিনীর নিয়ত ছিল, কাবাকে ধ্বংস করা।
সুরার সারসংক্ষেপ:
সুরার শুরুতেই প্রথম আয়াতে ‘তুমি কি দেখনি তোমার প্রতিপালক হস্তীবাহিনীর প্রতি কী করেছিলেন’ আল্লাহ তার নবীকে বলছেন, তুমি কি দেখনি? এরপর আল্লাহ বললেন, তোমার প্রতিপালক হস্তীবাহিনীর প্রতি কী করেছিলেন? ‘কি উপায়ে’ তিনি তাদের ব্যর্থ করে দিয়েছেন বলে আল্লাহ তার বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ ওই বাহিনীকে আসহাবে ফিল বলে বর্ণনা করেছেন।
দ্বিতীয় আয়াতে তিনি কি ওদের কৌশল ব্যর্থ করে দেননি? বলতে বোঝানো হয়েছে বৃহৎ হাতি বাহিনীসহ ক্ষমতাশালী, দাম্ভিক আবরাহাকে আল্লাহ বাঁধা দেন নাই। এরপর তৃতীয় আয়াতে‘ওদের বিরুদ্ধে তিনি ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবিল পাখি পাঠিয়েছিলেন’ আল্লাহ ছোট পাখিকে ব্যবহার করেছেন। এখানে ‘তাইরন’ পাখিকে বোঝানো হয়েছে। চতুর্থ আয়াত অনুযায়ী ‘যারা ওদের ওপর কঙ্কর ফেলেছিল।’
আবরাহা তখনকার স্থল বাহিনীর সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে হাতি বাহিনীকে নিয়ে আক্রমণ করেছিল।ক্ষুদ্র পাখির সাহায্যে আক্রমণ করে তাদের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন।
পঞ্চম ও শেষ আয়াতে ‘তারপর তিনি ওদেরকে (জন্তু জানোয়ারের) খাওয়া ভুসির মতো ক'রে ফেলেন।’আল্লাহ যে শুধু আবরাহাকে পরাস্ত করেছেন তা নয়, আগেও বহু জাতি ও সীমা লঙ্ঘনকারীদের আল্লাহ পরাস্ত করেছেন, শাস্তি দিয়েছেন। আল্লাহ এই সুরায় ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, কাবার মর্যাদা যারা লঙ্ঘন করতে যাবে তাদের তিনি অমর্যাদাকর পরিণতি দান করবেন। আল্লাহ আবরাহার বাহিনীর করুন পরিণতি মুহাম্মদ (সা.) কে জানানোর মাধ্যমে তাঁর মনে প্রশান্তি এনে দিয়েছিলেন।
(সুরা ফিল, আয়াত ১–৫, কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)