মাশা আল্লাহ আপনি হজের নিয়ত করেছেন এবং হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সব আয়োজন প্রায় সম্পন্ন; কিন্তু হজ পালনের নিয়ম সম্পর্কে আপনার রয়েছে কৌতূহল, আছে জানার ইচ্ছা। আসুন, আমরা হজ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি এবং এটি পালনের নিয়মগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। সুরা আল–ইমরানের ৯৭তম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যাঁদের মক্কায় কাবায় যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাঁর কর্তব্য হজ পালন করা। আর যে অবিশ্বাসী, হজকে অস্বীকার করল, সে আল্লাহকে অস্বীকার করল।’ প্রত্যেক মুসলমান নর বা নারীর জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ হলেও সবার ওপর হজ ফরজ নয়। হজ পালন করার কিছু পূর্বশর্ত আছে। আসুন, এগুলো জেনে নিই।
হজের পূর্বশর্তগুলো হলো, যিনি হজ করবেন তাঁকে অবশ্যই:
· মুসলমান হতে হবে;
· প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে;
· মানসিক ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে;
· হজে যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য থাকতে হবে এবং সেই অর্থ অবশ্যই হালালভাবে উপার্জিত হতে হবে। হজের জন্য ধার করা যাবে না;
· শারীরিকভাবে সক্ষম হতে হবে; এবং
· (নারীদের সঙ্গে) মাহরাম থাকতে হবে।
বর্তমানে সৌদি সরকার মাহরামের নিয়ম সহজ করে দিয়েছে। তাই অনেকেই এ সুযোগ নিয়ে থাকেন। তবে সহিহ হাদিস ও কোরআনে মাহরামের বিষয়টি স্পষ্ট।
সহিহ বুখারি হাদিসের দ্বিতীয় খণ্ডে হাদিস নম্বর ১০৮৮, ১০৮৭ ও ১০৮৬-এ বলা হয়েছে—আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একজন নারী, যিনি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করেন, তাঁর জন্য একজন মাহরাম ব্যতীত এক দিন এবং এক রাতের সফর অনুমোদনযোগ্য নয়।’ অন্য আরও সহিহ হাদিসে ব্যাপারটি স্পষ্ট যে মাহরাম ব্যতীত হজ পালন বাধ্যতামূলক নয়। তাহলে এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, মাহরাম আসলে কে? এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে সুরা আন-নিসার ২২ ও ২৩তম আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা আছে। সারসংক্ষেপ হলো, একজন নারীর স্বামী ব্যতীত তাঁর মাহরাম হবেন এমন ব্যক্তি, যাঁর সঙ্গে তাঁর রক্তের সম্পর্কের কারণে বিবাহ সম্পাদন সম্ভব নয় যেমন নারীর ভাই, বাবা ও ছেলে। যাঁর সঙ্গে এখনো বিবাহ সম্পাদন হয়নি অথবা মুখে বানানো ভাই, বান্ধবীর স্বামী কখনো মাহরাম হতে পারেন না। আবার একজন পুরুষ কখনো একাধিক নারীর মাহরাম হতে পারবেন না। যে নারীর মাহরাম নেই, কিন্তু তাঁর হজ সম্পাদনের আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে, তিনি অন্য কাউকে তাঁর হয়ে হজ পালনের জন্য পাঠাতে পারেন। তাই নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি রাসুল (সা.)-এর কথা শুনবেন, নাকি তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধে যাবেন। আপনার আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে ধর্ম পালন করুন।
হজে যাওয়ার আগে কিছু বিষয়ে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনি হজে যাচ্ছেন আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে। তাই আপনার ব্যবহার যেন আশপাশের লোকদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়। কাউকে কষ্ট দেবেন না, বরং কীভাবে কারও উপকার করা যায়, সেই চেষ্টা করুন। আপনার মুখে যেন সব সময় ভালো কথা থাকে। ভালো বা মন্দ যেকোনো কিছুতে বলুন—‘আলহামদুলিল্লাহ’; কোনো কিছুর শুরুতে বলুন ‘বিসমিল্লাহ’; কোনো কিছু চাইলে ‘ইনশা আল্লাহ’; কোনো কিছুর প্রশংসার ক্ষেত্রে ‘সুবহানাল্লাহ’ বা ‘মাশা আল্লাহ’; কাউকে ধন্যবাদ দিতে ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’; হাঁচি দিলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’; আর তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’; কোনো গুনাহ থেকে দূরে থাকতে ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ ইত্যাদি।
জিকির:
ভ্রমণের শুরু থেকেই নিজেকে আল্লাহর জিকিরে মগ্ন রাখুন। তসবিহ পড়ুন, কোরআন তিলাওয়াত করুন, আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা চান, আল্লাহ খুশি হন—এমন কাজ করুন।
ধৈর্য:
হজের একটা বড় পরীক্ষা হলো ধৈর্যধারণ; রেগে গেলে চলবে না। মনে রাখবেন, হজের সময়, আগে ও পরে এমন অনেক কিছু আপনাকে দেখতে হবে, যা আপনার ধৈর্য পরীক্ষা করবে। যে এজেন্সি আপনাকে হজে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের কথার সঙ্গে হয়তো কাজের মিল খুঁজে না–ও পেতে পারেন। অনেক কিছু তারা আপনাকে বলেছিল, তা হয়তো আপনি পাচ্ছেন না বা পাবেন না অথবা বিমান ভ্রমণে বা ইমিগ্রেশনে অথবা জেদ্দা এয়ারপোর্টের বাইরে আপনাকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারও সঙ্গে এ সময় ঝগড়ায় লিপ্ত হবেন না ও চেঁচামেচি করবেন না। মনে করবেন, আল্লাহ আপনার পরীক্ষা নিচ্ছেন এবং এটা তাঁরই ইচ্ছা। এমন সময় বেশি বেশি জিকির করুন ও পজিটিভ চিন্তায় থাকুন।