রোমানদের জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী সুরা রুমে
সুরা রুম (‘রোমবাসীরা’) পবিত্র কোরআনের ৩০তম সুরা। ৬০৩ খ্রিষ্টাব্দের সময়কালে রোমের অধিবাসীরা জীবন-মৃত্যুর সংকটকাল অতিক্রম করছিল। একের পর এক যুদ্ধে তারা পরাজিত হচ্ছিল। ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে পারস্য দামেস্ক পার হয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত দখল করে নেয়। এতে মুসলমানদের মন ভেঙে যায়। অবিশ্বাসীরা খুশি হয়। কারণ পারস্যরাও ছিল তাদের মতো পৌত্তলিক।
অন্যদিকে রোমানরা ছিল মুসলমানদের মতো নবী, আসমানি কিতাব, আখিরাত ইত্যাদিতে বিশ্বাসী। পরাজিত রোমানরা শিগগির জয়লাভ করবে, সুরা রুমের এই ভবিষ্যদ্বাণী নয় বছরের মধ্যে সত্য হয়। সুরা রুমে আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ববাদ, তাঁর মহিমা, প্রজ্ঞা ও অসীম দানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শেষ বিচারের দিনের কথা উল্লেখ করে মুহাম্মদ (সা.)-কে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মানুষের মধ্যে আছে ভাষার ভিন্নতা, রুচির ভিন্নতা ও রঙের ভিন্নতা। পৃথিবীতে ভাষাও অসংখ্য। ভাষাবৈচিত্র্যে রয়েছে আল্লাহর নিদর্শন। নবী-রাসুলেরা ছিলেন নিজ নিজ জাতির ভাষায় পণ্ডিত। তাঁরা জাতিকে মাতৃভাষায় দাওয়াত দিতেন। কোরআনে আছে, ‘তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আরেকটি হলো তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা ওদের কাছে শান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)
সুরা রুমে আরও কিছু বিষয় আছে। আল্লাহ প্রসঙ্গে সেখানে বলা হয়েছে, ‘তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আরেকটি হলো তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা ওদের কাছে শান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে অন্যতম নিদর্শন আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১-২২)
বলা হয়েছে, ‘তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মে প্রতিষ্ঠিত রাখো। তুমি আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ করো, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর প্রকৃতির কোনো পরিবর্তন নেই। এ-ই সরল ধর্ম; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। বিশুদ্ধচিত্তে তাঁর দিকে মুখ ফেরাও; তাকে ভয় করো; নামাজ কায়েম করো এবং অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’ (সুরা রুম, আয়াত: ৩০-৩১)
আল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি তো মৃতকে কথা শোনাতে পারবে না, বধিরকেও না। ওরা যখন তোমার ডাক শোনে, তখন মুখ ফিরিয়ে নেয়। তুমি অন্ধদের ওদের ভুল পথ থেকে পথে আনতে পারবে না। যারা আমার আয়াতে বিশ্বাস করে শুধু তারাই তোমার কথা শুনবে। কারণ, তারা তো মুসলমান (আত্মসমর্পণকারী)। আল্লাহ তোমাদের দুর্বলরূপে সৃষ্টি করেন, দুর্বলতার পর তিনি তোমাদের শক্তি দেন, শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও পক্বকেশ (বার্ধক্য)। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, আর তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ (সুরা রুম, আয়াত: ৫২-৫৪)
আল্লাহ বলছেন, যেদিন কিয়ামত হবে, সেদিন পাপীরা শপথ করে বলবে যে তারা একদণ্ডও অবস্থান করেনি। এভাবেই তাদের বিকার ঘটে। কিন্তু যাদের জ্ঞান ও বিশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তারা (ওদের) বলবে, ‘তোমরা তো আল্লাহর বিধানে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবস্থান করেছ। এই তো পুনরুত্থান দিবস, কিন্তু তোমরা তা জানতে না। সেদিন সীমালঙ্ঘনকারীদের ওজর-আপত্তি ওদের কোনো কাজে আসবে না এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার সুযোগও তাদের দেওয়া হবে না।’ (সুরা রুম, আয়াত: ৫৫-৫৭)
সুরাটির শেষে আল্লাহ প্রিয় নবীজি (সা.)–কে সান্ত্বনা দেন। কোরআনে আছে, ‘আমি তো মানুষের জন্য এই কোরআনে সব রকমের দৃষ্টান্ত দিয়েছি। তুমি যদি ওদের কাছে কোনো নিদর্শনও হাজির কর, তবু অবিশ্বাসীরা অবশ্যই বলবে, “তোমরা মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছ।” যাদের জ্ঞান নেই আল্লাহ তাদের হৃদয় এভাবে মোহর করে দেন। অতএব, ধৈর্য ধরো, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয়, তারা যেন তোমাকে বিচলিত করতে না পারে।’ (সুরা রুম, আয়াত: ৫৮-৬০)