ডাকাতি করেও ফিরে আসা যায়
মদিনায় সাহাবিদের যুগে একবার এক ডাকাতের উপদ্রব শুরু হলো। এই ডাকাত পরবর্তীকালে বড় মাপের তাবেয়ি হয়েছিলেন। তাঁর নাম ছিল আলী ইবনে আসাদি (রহ.)। মদিনার আশপাশে বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি ডাকাতি করে বেড়াতেন। শহরের নিরাপত্তা বাহিনী অনেক দিন ধরেই তাঁকে খুঁজছিল। তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
একদিন গভীর রাতে তিনি আবারও ডাকাতি করতে বের হলেন। শহরের সবাই তখন ঘুমিয়ে পড়েছে। দূর থেকে কার যেন গলার আওয়াজ ভেসে আসছিল। এই গভীর রাতে কে যেন মধুর সুরে কোরআন তিলাওয়াত করছিল। আলী ইবনে আসাদি শব্দ অনুসরণ করে এগিয়ে গেলেন। এক লোক সুরা জুমার তিলাওয়াত করছিল। আলী ইবনে আসাদি মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলেন, ‘হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)
আয়াত শুনে আলী ইবনে আসাদির চোখ ভিজে গেল। তিনি আল্লাহ তাআলার দয়া অনুধাবন করতে পারলেন। আলী ইবনে আসাদি (রহ.) মনে মনে তওবা করলেন, আর কখনো ডাকাতি করবেন না।
সকাল হতেই তিনি মসজিদে নববির দিকে রওনা হলেন। মসজিদে তখন বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) উপস্থিত ছিলেন। আলী ইবনে আসাদি (রহ.) তাঁকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন এবং কাঁদতে শুরু করলেন। তিনি আবু হুরায়রা (রা.)-এর কাছে সবকিছু খুলে বললেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর দয়া হলো।
মসজিদে এমন অনেকেই উপস্থিত ছিলেন, যাঁরা এত দিন তাঁকে ধরার চেষ্টা করছিলেন। সবাইকে এগিয়ে আসতে দেখে আলী ইবনে আসাদি চিৎকার দিয়ে বললেন, তোমরা আমাকে ছুঁতে পারবে না। কারণ, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিয়েছেন, ‘কিন্তু যারা গ্রেপ্তারের আগে তওবা করে, তবে জেনে রেখো, আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৩৪)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) এবার মুখ খুললেন, ‘আলী ইবনে আসাদি সঠিক কথাই বলেছে। তাকে এখন শাস্তি দেওয়ার নিয়ম নেই।’
এরপর হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আলী ইবনে আসাদি (রহ.)-কে নিয়ে মদিনার গভর্নরের কাছে গেলেন। তখন হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর শাসনকাল। আবু হুরায়রা (রা.) গভর্নরকে বললেন, ‘সে একসময় ডাকাতি করত, তবে এখন আল্লাহর পথে আছে। তাকে শাস্তি দেওয়ার কোনো বিধান নেই, যদি না সে আগের অবস্থায় ফিরে যায়।’
এ ঘটনা থেকে ইসলামি যুগের শাসনব্যবস্থার চিত্র ফুটে ওঠে। শরিয়াহভিত্তিক শাসনব্যবস্থা কতই না সুন্দর ছিল, তা এ ঘটনা থেকে প্রমাণ হয়। অপরাধীরাও সেই সমাজে নিজেকে শুধরে নিয়ে পরিপূর্ণভাবে জীবন যাপন করতে পারতেন। বর্তমান উন্নত শাসনব্যবস্থায়ও এ ধরনের চিত্র বিরল।
গল্পের আরেকটি শিক্ষা হলো—কেউ যত বড় পাপই করুক না কেন, সে যদি সত্যিকার অর্থে ফিরে আসে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। এই ক্ষমা ততক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে, যতক্ষণ না মৃত্যু উপস্থিত হয়।
অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ