ইহরাম বাঁধা

পবিত্র মসজিদুল হারাম (কাবা শরিফ), মক্কা, সৌদি আরব

ইহরাম হলো একটি সার্বিক অবস্থা। মনে করুন, আপনি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন; ঠিক যেমন মৃত্যুর পর, কিয়ামতের দিন বান্দারা আল্লাহর সামনে দাঁড়াবেন। আপনি যেন আল্লাহর সামনে দুই টুকরা কাপড় পরে দাঁড়িয়েছেন এবং হাজিরা দিচ্ছেন।

ইহরামে আসার জন্য আপনাকে ইহরাম ধারণের আগেই কিছু কাজ করে নিতে হবে। অনেকেই ইহরাম বলতে সাদা দুটি কাপড়ের টুকরাকে মনে করে থাকেন। আসলে (পুরুষদের জন্য) পরিধানের এই দুটি কাপড় ইহরাম নয়; বরং এটি ইহরামের একটি অংশ—এদের বলে ‘ইজার’ ও ‘রিদা’। ‘ইজার’ হলো লুঙ্গির মতো একটি সেলাইবিহীন কাপড় আর ‘রিদা’ হলো সেলাইবিহীন চাদর।

তালবিয়া:

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্‌ক, লা শারিকা লাক।’

অর্থ: আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, এই যে আমি। আর তোমার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির। সব প্রশংসা ও কর্তৃত্ব শুধু তোমারই, আর তোমার কোনো শরিক নেই।

আরও পড়ুন

ওমরাহ ও হজ করার আগেই সব মুতামাত্তিকে ইহরাম ধারণ করতে হয়। যেদিন আপনার ফ্লাইট, সেদিন বিমানবন্দরে রওনার আগে শুধু নিয়ত বাদে বাকি সব কাজ সেরে ফেলতে হবে। বিশেষ এই কাজগুলো হলো:

·      হাত ও পায়ের নখ ছোট করে কেটে ফেলুন।

·      অপ্রয়োজনীয় লোম বা চুল পরিষ্কার করে নিন। গোঁফ ছোট করে ছেঁটে নিন (দাড়ি ছোট করার দরকার নেই)।

·      অজু ও গোসল করুন।

·      (শুধু পুরুষেরা) দাড়ি, মাথায়, শরীরে আতর লাগান (কাপড়ে নয়)।

·      রিদা (ওপরের অংশ) ও ইজার (নিচের অংশ) পরিধান করুন।

নারীদের ইহরাম একটু ভিন্ন। নারীরা যেকোনো রঙের বা প্রকারের কাপড় পরতে পারেন। তবে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে যে কোনোভাবেই যেন এমন ধরনের কাপড় না পরা হয়, যেটিতে পর্দা নষ্ট হয় ।

আরও পড়ুন

ঢাকা থেকে মক্কার উদ্দেশে যাঁরা উড়োজাহাজে উঠেছেন, তাঁরা পাইলটের ঘোষণার অপেক্ষা করুন। ‘ইয়ালামলাম’ (মিকাত) আসার আগেই উড়োজাহাজের পাইলট ঘোষণা দিলে হজযাত্রীরা অজু করে ওমরাহর নিয়ত করে নিন। আর যাঁরা মদিনা থেকে মক্কায় আসছেন, তাঁরা ‘জুল হুলায়ফা’ মসজিদে (মিকাত) এসে ইহরাম ধারণ করে ওমরাহর নিয়ত করুন।

নিয়ত পড়ার বিষয় নয়, এটি হলো মনের সংকল্প। ঠিক যেমন আমরা নামাজের জন্য নিয়ত করে থাকি। তবে হজের ক্ষেত্রে নিয়ত পড়তে হবে। যেহেতু আপনি প্রথমে ওমরাহ করবেন, সেহেতু আপনি এখন ওমরাহর নিয়ত করে নিন:

‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা উমরাতান’

অর্থ: হে আল্লাহ এই যে আমি, ওমরাহ করতে হাজির হয়েছি।

এই নিয়ত যেকোনো ওয়াক্তের নামাজের পর করা ভালো। রাসুল (সা.) জোহরের নামাজের পর নিয়ত করেছিলেন। ইহরাম পরিপূর্ণ করার পর আপনি ওয়াক্তের নামাজ বা দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিন। আপনি যদি উড়োজাহাজে থাকেন, তাহলে নিজের সিটে বসেই দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিন।

এরপর বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ করতে হবে। যত খুশি ততবার। পুরুষেরা জোর গলায় পড়বেন। আর নারীরা পড়বেন আস্তে আস্তে যেন নিজে তাঁর পড়ার শব্দ শুনতে পান।

আরও পড়ুন

তালবিয়া:

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্‌ক, লা শারিকা লাক।’

অর্থ: আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, এই যে আমি। আর তোমার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির। সব প্রশংসা ও কর্তৃত্ব শুধু তোমারই, আর তোমার কোনো শরিক নেই।

আরও পড়ুন

ইহরাম থাকা অবস্থায় যা যা করা যাবে না

ইহরাম থাকা অবস্থায় বেশ কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজগুলো সম্পাদন করা হয়, সে ক্ষেত্রে আপনাকে ‘দম’ বা পশু কোরবানি দিতে হবে। ইহরামরত অবস্থায় যে কাজগুলো করা যাবে না, সেগুলো হলো:

•   চুল বা নখ কাটা।

•   সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার করা।

•   পুরুষেরা সেলাই করা কাপড় পরিধান করতে পারবেন না।

•   নারীরা মুখ ঢাকতে পারবেন না বা হাতে গ্লাভস পরতে পারবেন না।

•   পশু শিকার করা যাবে না বা এর গোশত খাওয়া যাবে না।

•   গাছ বা পাতা ছেঁড়া যাবে না।

•   কারও পড়ে যাওয়া জিনিস ওঠানো যাবে না, যদিনা ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্যে ওঠানো হয়।

•   সহবাস করা যাবে না।

•   কোনো প্রকার খারাপ কাজ করা যাবে না।

•   ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া যাবে না।

তবে ইহরাম থাকা অবস্থায় কিছু কাজ করা যেতে পারে। যেমন:

•   বেল্ট পরা, হেয়ারিং এইড, পাওয়ার চশমা পরা ইত্যাদি।

•   গোসল করা। তবে সাবান হতে হবে গন্ধহীন।

•   ইহরামের কাপড় ধোয়া বা নতুন ইহরামের কাপড় পরা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন