আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)। তাই মুমিনগণ আল্লাহর ঘরে হাজিরা দিয়ে বলেন, ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ (হাজির আমি আপনার দরবারে, হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির; নিশ্চয়ই সব প্রশংসা আপনার জন্য, সব নিয়ামত আপনার প্রদত্ত, আপনার রাজত্বে আপনার কোনো শরিক নেই।)
কোরআনে কারিমের সূচনাতেই দোয়া শেখানো হয়েছে, ‘আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই সাহায্য চাই। আমাদের সঠিক সরল পথে পরিচালিত করুন। (আমাদের পরিচালিত করুন) তাদের পথে, যাদের আপনি পুরস্কার দিয়েছেন; তাদের পথে নয়, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট।’ (সুরা-১ ফাতিহা, আয়াত: ৪-৭)।
হজ বা ওমরাহর জন্য ইহরামের নিয়ত করা থেকে শুরু করে হজের সফর পুরোটাই দোয়া কবুলের সময়। হজ ও ওমরাহ সম্পন্ন করে বাড়িতে ফিরে আসার পরেও ৪০ দিন পর্যন্ত হাজির দোয়া কবুল হতে থাকে।
হজের পর হাজি যত দিন গুনাহমুক্ত থাকবেন, তত দিন তাঁর দোয়া কবুল হতে থাকবে। অন্যের জন্য দোয়া করলে তা তার জন্য ও নিজের জন্য কবুল হয়। সবার জন্য দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
হজের সফরে এমন কিছু সময় ও স্থান রয়েছে, যে সময়ে ও স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অত্যধিক, যে স্থানগুলোতে পূর্বেকার নবী–রাসুলদের দোয়া কবুল হয়েছিল বলে বর্ণিত আছে, সেখানে নবী করিম (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও অলি আউলিয়াগণের দোয়া কবুল হয়েছিল, সেসব জায়গায় দোয়া করা বাঞ্ছনীয়। মক্কা মোকাররমার সব স্থানে দোয়া কবুল হয়।
কাবা ও তার সংলগ্ন দোয়া কবুলের স্থানগুলো হলো হারাম শরিফ, মসজিদুল হারাম, কাবা শরিফ, হাতিমে কাবা, মিজাবে রহমত, হাজরে আসওয়াদ, রোকনে হাজরে আসওয়াদ, রোকনে ইরাকি, রোকনে শামি, রোকনে ইয়ামানি এবং রোকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান, মুলতাজিম, কাবার দরজা, মুস্তাজার, মাকামে ইব্রাহিম, জমজম কূপ ও মাতাফ।
তাওয়াফের প্রতি চক্করের শেষে পড়তে হয়, ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাসানা, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানা; ওয়া কিনা আজাবান নার।’ (হে আল্লাহ, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং দোজখের আগুন থেকে আমাদের রক্ষা করুন।) (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২০১)।
আরাফাত, জাবালে রহমত ও মসজিদে নামিরায় দোয়া কবুল হয়। আরাফাতের ময়দানে হজরত আদম (আ.)–এর সঙ্গে হজরত হাওয়া (আ.)–এর পুনর্মিলন হয় এবং তাঁরা নিজের ভুলের জন্য এখানে আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া-মোনাজাত করেন এবং তা কবুল হয়। সে জন্য হাজিরা এই স্থানে সমবেত হয়ে দোয়া করেন: ‘রাব্বানা জলামনা আনফুসানা, ওয়া ইন লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা; লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’ (হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নফসের প্রতি জুলুম করেছি, আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন; অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে পড়ে যাব।) (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ২৩)
মুজদালিফা, মিনা ও মসজিদে খায়িফ দোয়া কবুলের ঐতিহাসিক স্থান। মসজিদে খায়িফ মিনা প্রান্তরে অবস্থিত। এখানে আদিকাল থেকে আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত ৭০ জন পয়গাম্বর (আ.) আল্লাহর ইবাদত–বন্দেগি করেছেন।
জামারাত বা পাথর মারার স্থানসমূহও দোয়া কবুলের স্থান। এটি মিনার পাশেই অবস্থিত। এগুলো ছোট শয়তান (জোমরায়ে উলা), মেজ শয়তান (জোমরায়ে উস্তা), বড় শয়তান (জোমরায়ে আকাবা) নামে পরিচিত।
হজরত ইসমাইল (আ.)–কে কোরবানি করার জন্য নিয়ে যাওয়ার পথে এই স্থানে শয়তান বাধা সৃষ্টি করলে তিনি পাথর ছুড়ে শয়তানকে বিতাড়িত করেন। এখানে দোয়া কবুল হয়। হজের পর হাজি যত দিন গুনাহমুক্ত থাকবেন, তত দিন তাঁর দোয়া কবুল হতে থাকবে। অন্যের জন্য দোয়া করলে তা তার জন্য ও নিজের জন্য কবুল হয়। সবার জন্য দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কখনো কারও জন্য বদদোয়া করা উচিত নয়।
‘মুমিনের সব দোয়া সব সময় কবুল হয়। দোয়া কবুল হওয়ার তিনটি স্তর রয়েছে। এর তৃতীয় স্তর হলো যা চাইলাম সরাসরি তা পাওয়া; দ্বিতীয় স্তর হলো কল্যাণকর বিকল্প কিছু পাওয়া এবং প্রথম স্তর হলো আখিরাতে কল্যাণ পাওয়া। সেদিন বান্দা দুনিয়াতে অপূর্ণ দোয়ার পরিণামের ফল দেখে আফসোস করে বলবে, কতই–না ভালো হতো যদি দুনিয়াতে আমার কোনো দোয়াই নগদে কবুল না হতো; তবে আজ তা পেতাম।’ (মিশকাত, রিয়াদুস সালেহীন)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম