স্বাধীনতার সার্থকতা ও বিজয়োত্তর করণীয়

স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। ইসলামের প্রথম বাক্য কালেমা তাইয়েবায় ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ‘এক আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো প্রভু নেই, হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।’ যিনি এই ঘোষণা দেন, তিনি মানব–দানব সব ধরনের প্রভুর গোলামি থেকে মুক্ত হয়ে যান এবং আদর্শ হিসেবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে গ্রহণ করেন।

বিজয় মানুষকে সুপথে ও কল্যাণকর্মের সুযোগ করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়, যেন আল্লাহ তোমার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিগুলো মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন এবং আল্লাহ তোমাকে বলিষ্ঠ সাহায্য দান করেন।’ (সুরা-৪৮ ফাতহ, আয়াত: ১-৩)

বিজয়ের সফলতার জন্য সামাজিক শৃঙ্খলা ও ঐক্য সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিজয়ীদের করণীয় বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তাদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত আদায় করবে এবং সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে আর সব কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারে।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৪১)

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা বিজয়ের পর ঘোষণা করেন, ‘আজ আমি তাই বলব, যা আমার ভাই ইউসুফ (আ.) তাঁর অপরাধী ভাইদের উদ্দেশে বলেছিলেন, “তিনি বললেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ বা অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন এবং তিনিই সব দয়াবানের শ্রেষ্ঠ দয়াময়।”’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ৯২; তাফসিরে কুরতুবি)

বিজয়ে উন্মাদনা নয়, শুকরিয়া ও সংযম কাম্য। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন; তখন আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন; তিনি তওবা কবুলকারী।’ (সুরা-১১০ নাসর, আয়াত: ১-৩)

বিজয়ের পর সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। কোরআন করিমে রয়েছে, ‘তোমরা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা কোরো না।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১১; সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৬)। ‘আল্লাহ ফিতনা-ফ্যাসাদ তথা অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা পছন্দ করেন না।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২০৫)

সুতরাং জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তায় এবং সহিংসতা-হিংস্রতা প্রশমনে ছাত্র-জনতা-উলামা সমন্বয়ে এলাকাভিত্তিক প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে হবে। মসজিদের ইমাম-খতিবরা তাঁদের বয়ানে, মাদ্রাসার শিক্ষকেরা সুপরামর্শ ও সদুপদেশ দিয়ে উগ্রতা, প্রতিশোধপরায়ণতা ও প্রতিহিংসার রোষানল থেকে জনগণকে বিরত রাখতে হবে।

দেশ আপনার, প্রতিবেশীও আপনার; তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বও আপনার; দেশের স্বার্থে দায়িত্বশীল ইতিবাচক আচরণ করতে হবে। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা সুরক্ষায় ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়।’ বলা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা,)! কে (মুমিন নয়)? তিনি বললেন, ‘যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়।’ (বুখারি ও মুসলিম, মুত্তাফাক আলাইহি)। ‘সে বেহেশতে যেতে পারবে না, যার প্রতিবেশী তার কাছে নিরাপদ নয়।’ (মুসলিম)

মুসলিম সমাজে অমুসলিম নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মুসলিম নাগরিকের দায়িত্ব। যার উদাহরণ নবীজি (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মদিনার ইসলামি সমাজ ও রাষ্ট্র। দায়িত্ব–কর্তব্য পবিত্র আমানত; আমানতের খেয়ানত করা অপরাধ। বিজয় তখন সার্থক হবে, যখন স্বাধীনতার মূল চেতনা ‘ইনসাফভিত্তিক সমাজ’ কায়েম হবে।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

  • যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

  • [email protected]