শিশুর খাদ্যনিরাপত্তায় ইসলামের নির্দেশনা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার গুণবাচক নামগুলোর অন্যতম হলো ‘রাজ্জাক’ অর্থাৎ রিজিকদাতা। তিনি মানুষ সৃষ্টি করার আগে তার রিজিক প্রস্তুত করেছেন। শিশু দুনিয়ায় আসার আগেই তার উপযোগী খাবারের আয়োজন করে রেখেছেন এবং শালদুধসহ প্রয়োজনমতো দুধ পান করানো শিশুর অধিকার এবং পিতা-মাতা, অভিভাবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে নির্দেশনা দিয়েছেন।
কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জননীরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে, যারা দুগ্ধপান পূর্ণ করতে চায়। সন্তানের জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের (স্ত্রী ও সন্তানের) ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা।...এবং উত্তরাধিকারীরও অনুরূপ কর্তব্য।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৩৩)। ‘গর্ভধারণ ও দুগ্ধপান সম্পন্ন হয় ৩০ মাসে।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)। ‘আর দুধ পান ছাড়াতে হয় দুই বছর অন্তর।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)
শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে মায়ের দুধ পেলে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত তার অন্য কোনো খাবার প্রয়োজন হয় না। এমনকি পানির প্রয়োজন নেই। এই সময় অন্য খাবার দিলে শিশু নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। দূষিত পানির কারণে বিভিন্ন ধরনের পেটের অসুখবিসুখ হয়। মায়ের দুধ কম হলে তা বাড়ানোর জন্য মায়ের পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন শিং মাছ, মাগুর মাছ ও শোল মাছের ঝোল; মুরগির স্যুপ, কবুতরের মাংস এবং লাউশাক, কচুশাক ইত্যাদি। শিশুকে আলগা দুধ না দিয়ে ওই দুধ তার মাকে খাওয়ালে সন্তান মায়ের দুধ পাবে। এ অবস্থায় মায়ের যত্ন মানেই শিশুর যত্ন। শিশুর খাদ্যনিরাপত্তা মায়ের গর্ভাবস্থা থেকেই শুরু করতে হয়। কারণ, শিশু মাতৃগর্ভে থাকাকালে মায়ের শরীর থেকেই খাদ্য গ্রহণ করে পুষ্টি লাভ করে থাকে। এ সময় গর্ভবতী মাকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রচলিত ক্ষতিকর কুসংস্কার মানা যাবে না। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো প্রয়োজনীয় টিকা গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। মনে রাখতে হবে, ‘সুস্থ মা সুস্থ শিশু’। গর্ভকালীন অবস্থা এবং সন্তান প্রসব মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়। তাই প্রসবের আগেই স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং প্রশিক্ষিত ধাত্রীর মাধ্যমে বিশেষ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সন্তান প্রসব করাতে হবে।
সুস্থ, সবল, নীরোগ ও পবিত্র জীবনের জন্য চাই বিশুদ্ধ খাবার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা হালাল ও উত্তম রিজিক আহার করো, যা আমি তোমাদের দিয়েছি’
আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)। ‘তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সঙ্গে এবং প্রসব করে কষ্টের সঙ্গে।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)
আল্লাহ জাল্লা শানুহু পরম কৌশলী, তাঁর সব কাজে প্রজ্ঞার স্বাক্ষর বিদ্যমান। সন্তান যখন ভূমিষ্ঠ হয়, তখন তার মুখে দাঁত থাকে না। অর্থাৎ এ সময় তার জন্য মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট, বাড়তি বা আলগা খাবার প্রয়োজন নেই এবং কোনো শক্ত খাবার এই সময় তার জন্য প্রযোজ্য নয়। ছয় মাস বয়সের পর থেকে সাধারণত শিশুর দাঁত ওঠা শুরু হয়। এর মানে হলো এ সময় থেকে কিছু কিছু পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত বাড়তি খাবার তাকে দিতে হবে। তবে তা দিতে হবে চটকিয়ে নরম করে।
আল্লাহর কুদরতে ধীরে ধীরে শিশুর দাঁতের সংখ্যা ও হজমশক্তি বাড়তে থাকবে এবং তার প্রয়োজনীয় খাদ্যের পরিমাণ এবং বৈচিত্র্যও বাড়াতে হবে।
সুস্থ, সবল, নীরোগ ও পবিত্র জীবনের জন্য চাই বিশুদ্ধ খাবার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা হালাল ও উত্তম রিজিক আহার করো, যা আমি তোমাদের দিয়েছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭২)
সুস্থ–সবল শিশুর জন্য গর্ভধারণের আগে মাকে শারীরিক পরিপূর্ণতা ও মানসিক পরিপক্বতা অর্জন করতে হবে। শিশু মাতা বা অপ্রাপ্তবয়স্ক মা গর্ভকালীন নানান জটিলতায় ভোগেন, প্রসবকালীন মা ও শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে এবং সন্তান অপুষ্ট ও বিবিধ পীড়াগ্রস্ত হয়। মা ও সন্তানের খাদ্যনিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্যের জন্য দুই সন্তানের বয়সের ব্যবধান অন্তত দু–তিন বছর হওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রাকৃতিক ও সামাজিক দুর্যোগকালীন গর্ভবতী নারী ও শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে, এ সময় তাদের খাদ্যনিরাপত্তায় ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অভিভাবক ও দায়িত্বশীল সবারই বিশেষ যত্নবান হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম