যারা তাদের রবকে ভয় করে চলে
ঘটনাটি প্রখ্যাত তাফসিরবিদ ইবনে কাসির (রহ.)-এর বর্ণনা থেকে পাওয়া গেছে। আরবে সাহাবিদের যুগে এক বালক ছিল। সে সব সময় মসজিদে এসে নামাজ পড়ত। বাকি সাহাবিদের সঙ্গে মিশত, তাদের সম্মান করত। মসজিদের বিভিন্ন আলোচনায় সে শরিক হতো। সাহাবিরা তাকে খুব পছন্দ করত। চারিত্রিক দিক দিয়েও সে ছিল আর দশটা যুবকের চেয়ে আলাদা।
এই যুবকের পরিবার বলতে ছিল শুধু তার বৃদ্ধ বাবা। তার মা আগেই মারা গিয়েছিল। সে প্রতিদিন বাসায় গিয়ে বাবার সেবা করত।
হজরত ওমর (রা.)-এর নজর পড়ল এই যুবকের ওপর। তিনি বুঝলেন, ছেলেটির অনেক বড় কিছু হওয়ার যোগ্যতা আছে। ওমর (রা.) তাকে নিজের ছাত্র হিসেবে গ্রহণ করলেন।
এর পর থেকে ছেলেটিকে সব সময় হজরত ওমর (রা.)-এর আশপাশে দেখা যেত। তিনি যেখানেই যেতেন, তাকেও সঙ্গে নিয়ে যেতেন।
ছেলেটি প্রতিদিন মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার সময় একটি মেয়ে তার জন্য অপেক্ষা করত। মেয়েটি প্রতিদিন তাকে মন্দ কাজের জন্য ডাকত। সে এগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রতিদিন চোখ নিচু করে চলে আসত। একদিন মেয়েটি আবারও তাকে ডাক দিল। এবার সে মেয়েটির ডাকে সাড়া দিয়ে তার পেছনে পেছনে যেতে শুরু করল। যে–ই না সে মেয়েটির ঘরে প্রবেশ করবে, হঠাৎ তার কোরআনের একটি আয়াত মনে পড়ে গেল, ‘যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে, তাদের ওপর শয়তানের আগমন ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে ওঠে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ২০১)
হঠাৎ তার মনে ভয় ঢুলে গেল। সে ঘরে ঢোকার আগেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেল। শেষ পর্যন্ত মেয়েটি তাকে বহন করে বাসায় পৌঁছে দিল। ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে তার বাবা অনেক চিন্তিত হয়ে পড়লেন। মনে হচ্ছিল যেন ছেলেটি আর বাঁচবে না।
এরপর হঠাৎ তার জ্ঞান ফিরে এল। সে তার বাবাকে সব ঘটনা খুলে বলল। কীভাবে সে আয়াত পাঠ করেছিল আর সঙ্গে সঙ্গে সে জ্ঞান হারিয়েছিল। আল্লাহ তাআলা তাকে এবারের মতো বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
তার বাবা যখন জিজ্ঞাসা করলেন কোন আয়াতটি মনে পড়েছিল। ছেলেটি সুরা আরাফের আয়াত পড়তে শুরু করল। আয়াত শেষ করার আগেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।
হজরত ওমর (রা.) ছেলেটির মৃত্যুর সংবাদ শুনে খুবই মর্মাহত হলেন। সেদিন রাতেই তিনি ছেলেটির জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করেন। দাফন শেষ করে তিনি সুরা আর রহমানের একটি আয়াত পাঠ করলেন, ‘যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত।’
এরপর কবর থেকেই ছেলেটি কথা বলে উঠল, ‘আল্লাহ আমাকে দুটি নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছেন।’
অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ