হজরত বেলাল (রা.) অনুপস্থিত থাকলে নবীজি (সা.) তাঁকে বলতেন আজান দিতে
হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)-এর মা ছিলেন কট্টর পৌত্তলিক। সাদ (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণ তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি সাদকে জানিয়ে দেন, যতক্ষণ না সাদ ইসলাম ত্যাগ করছেন, ততক্ষণ তিনি কিছু খাবেন না। সাদ (রা.) বিচলিত হয়ে পড়লেন। রাসুল (সা.)-এর কাছে গিয়ে বিষয়টি তিনি জানালেন। তখনই সুরা আনকাবুতের ৮ নম্বর আয়াতটি নাজিল হয়, ‘আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছি, তবে ওরা যদি তোমাকে আমার সঙ্গে এমন কিছু শরিক করতে বাধ্য করে, যার সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মানবে না। আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন (করতে হবে)। তারপর তোমরা ভালো-মন্দ যা কিছু করেছ, আমি তা তোমাদেরকে জানিয়ে দেব।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৮)
এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর হজরত সাদ (রা.)-এর মানসিক অস্থিরতা দূর হয়। সাদ (রা.)-এর মা তিন দিন কিছু মুখে দিলেন না, কারও সঙ্গে কথা বললেন না। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে লাগল। অবশেষে সাদ (রা.) তাঁর মাকে বললেন, ‘আপনি যদি জেদ করে পানাহার ছেড়ে দিয়ে প্রাণ বিসর্জনও দেন, তবু আমার পক্ষে সত্য ধর্ম পরিত্যাগ করা সম্ভব হবে না।’ তাঁর এই দৃঢ়তা মায়ের মনে গভীর দাগ কাটে। তিনিও পরে ইসলাম গ্রহণ করেন।
হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) ছিলেন ইসলামের সূচনালগ্নের ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন। হজরত আবু বকর (রা.)-এর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর বয়স তখন ১৭ বছর।
সাদ (রা.) অত্যন্ত মর্যাদাবান সাহাবি ছিলেন। খোলাফায়ে রাশেদিনসহ সব সাহাবির কাছেই তিনি ছিলেন খুবই সম্মানিত। সাদ (রা.)-এর মতামতকে যে তাঁরা খুব গুরুত্ব দিতেন, অনেক হাদিসে তা বোঝা যায়। একবার সাদ (রা.) মোজার ওপর মাসেহ করা বিষয়ে একটি হাদিস বর্ণনা করেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) তাঁর বাবা উমর ফারুক (রা.)-এর কাছ থেকে হাদিসটির সত্যতা যাচাই করতে গেলেন। উমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হাদিসটি কি তুমি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের কাছে শুনেছ?’ আবদুল্লাহ (রা.) বললেন, ‘হ্যাঁ’। উমর (রা.) তখন বললেন, ‘সাদ যখন তোমাদের কাছে কোনো হাদিস বর্ণনা করেন, তখন সেটা নিয়ে অন্য কাউকে কিছু জিজ্ঞেস কোরো না।’
রাসুল (সা.) বেঁচে থাকাকালে হজরত বেলালের অনুপস্থিতিতে সাদ (রা.) তিনবার আজান দিয়েছেন। রাসুল (সা.) তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘আমার সঙ্গে বেলালকে না দেখলে তুমি আজান দেবে।’