মদিনার ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখছেন হজযাত্রীরা
হজের পরে যাঁরা মদিনা এসেছেন, তাঁরা মসজিদে নববিতে গিয়ে নামাজ পড়ছেন। মদিনার ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখছেন। ফজর নামাজের পরে বের হলে সবকিছু ভালোভাবে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। মসজিদে নববির সামনে ও শহরের অন্যান্য রাস্তায় চালকেরা ‘জিয়ারা, জিয়ারা’ বলে হজযাত্রীদের ডাকাডাকি করেন। জিয়ারা মানে ‘ভ্রমণ’।
কয়েকজন মিলে গাড়ি ভাড়া নিলে সুবিধা বেশি। এই জিয়ারা প্যাকেজে ওহুদ পাহাড়, মসজিদে কুবা ও মসজিদে কেবলাতাইন ঘুরে দেখা যায়। এতে জনপ্রতি ১০-১৫ রিয়াল খরচ পড়ে। অবশ্য এই প্যাকেজে খন্দক নেই। খন্দক আলাদাভাবে যেতে হয়। মদিনার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
মসজিদে কুবা: মুসলমানদের প্রথম মসজিদ হচ্ছে মসজিদে কুবা। মসজিদে নববী থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এই মসজিদ। ধবধবে সাদা রঙের অন্যান্য নির্মাণশৈলীর এই মসজিদের নাম রাখা হয়েছে একটি কূপের নামানুসারে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসার পর সাহাবাদের নিয়ে নিজের পবিত্র হাতে এই মসজিদ তৈরি করেন। রাসুল (সা.) মদিনায় ঢুকে শহরের প্রবেশদ্বার কুবায় নামাজ পড়েন। এই মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায়ে এক ওমরাহর সওয়াব পাওয়া যায়।
কেবলাতাইন মসজিদ: কেবলাতাইন মসজিদ মানে দুই কেবলার মসজিদ। রাসুল (সা.) সাহাবিদের নিয়ে এখানে নামাজ আদায়ের সময় কেবলা পরিবর্তনের ওহি নাজিল হয়। এ সময় ওহি পাওয়ার পর আল-আকসা থেকে নামাজের মধ্যে মুখ ঘুরিয়ে কাবামুখী হয়ে নামাজ আদায় করেন। এ জন্য এই মসজিদের নাম কেবলাতাইন (দুই কেবলার মসজিদ)। ভেতরে মূল অংশ অক্ষত রেখে চারদিকে দালান করে মসজিদ বাড়ানো হয়েছে।
ওহুদ পাহাড়: ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় যুদ্ধ হয় এই পাহাড় ঘিরে। দুই মাথাওয়ালা একটি পাহাড়, মাঝে একটু নিচু। তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে ওহুদ যুদ্ধ হয়। ওহুদ পাহাড় মদিনার সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে দূরে অবস্থিত। পাথরের এই পাহাড়ের উচ্চতা ৩৫০ মিটার। পূর্ব থেকে পশ্চিমে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পাহাড়টির প্রস্থ ১০০ থেকে ৩০০ মিটার। ওহুদ শব্দের অর্থ এক বা একক। এটি অন্যান্য পাহাড় থেকে স্বতন্ত্র ও একক বলে ওহুদ নামকরণ করা হয়েছে। পাহাড়টি মূল্যবান পাথরে সমৃদ্ধ। পাহাড়ের পূর্বে বিমানবন্দর রোড এবং পশ্চিমে আল-উজুন গ্রাম।
মসজিদে গামামাহ: গামামাহ শব্দের অর্থ বৃষ্টি। বৃষ্টির জন্য হজরত মুহাম্মদ (সা.) এখানে নামাজ আদায় করেছেন। তাই মসজিদটির নাম রাখা হয় গামামাহ মসজিদ। রাসুল (সা.) এখানে প্রথম ঈদের নামাজ আদায় করেন। একে ঈদগাহের মসজিদও বলে। বাদশাহ ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স: মদিনা শহরে তাবুক সড়কে বাদশাহ ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স। হজ শেষে হাজিরা বিমানবন্দর ও হজ টার্মিনাল দিয়ে দেশে ফেরার সময় তাঁদের হাতে উপহার হিসেবে পবিত্র কোরআন শরিফ দেওয়া হয়। এখান থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ কপি কোরআন শরিফ ছাপা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় পবিত্র কোরআনের অর্থ ও তফসির মুদ্রণ, ভিডিও, সিডি, ক্যাসেট আকারে প্রকাশ করা হয়। রয়েছে কোরআন গবেষণা কেন্দ্র, পাঠাগার। এখানে পবিত্র কোরআন বিনা মূল্যে বিলি করা হয়।
খন্দক: আরব ও ইহুদি গোত্রগুলো সম্মিলিতভাবে মদিনা অবরোধ করে। একে আজহাবের যুদ্ধও বলা হয়। তবে এটি খন্দকের যুদ্ধ নামে বেশি পরিচিত। খন্দক অর্থ পরিখা। পরিখা খননের মাধ্যমে শত্রু পক্ষকে কাবু করার নতুন রণকৌশল ছিল এই যুদ্ধ। মুসলমানরা আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধের ময়দানে দীর্ঘ পরিখা খনন করেন। হজরত সালমান ফারসি (রা.)-এর পরামর্শে মদিনার সব প্রবেশপথে পরিখা খনন করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে মুসলমানরা।