দেখতে মনে হয়েছে পরাজয়, আল্লাহ বলেছেন বিজয়
সুরা ফাতহ পবিত্র কোরআনের ৪৮তম সুরা। ষষ্ঠ হিজরিতে মোহাম্মদ (সা.) তাঁর এক হাজার চার শ জন সাহাবিকে নিয়ে ওমরা পালনের জন্য মক্কার দিকে অগ্রসর হলে হুদাইবিয়ায় কুরাইশরা তাঁদের বাধা দেন। সেখানে একটি চুক্তি করে কাবা শরিফে জিয়ারত না করে তাঁদের মদিনায় ফিরে আসতে হয়। মক্কাবাসীরা চুক্তি ভঙ্গ করায় এই সুরায় বর্ণিত মক্কা বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী দুই বছর পর অষ্টম হিজরিতে বাস্তবায়িত হয়।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মোহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। তাঁর সহচরেরা অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর আর নিজেরা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল।’ যারা বিশ্বাসী এবং সৎ, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন এবং মহাপুরস্কার দেবেন। ফাতহ অর্থ বিজয়। ষষ্ঠ হিজরির জিলকদ মাসে মক্কার কাফেরদের সঙ্গে সন্ধি চুক্তি সম্পাদনের পর মদিনায় ফেরার সময় সুরাটি নাজিল হয়। আল্লাহ যে হুদাইবিয়ার সন্ধির আকারে নবী করিম (সা.) ও মুসলমানদের মক্কায় বিজয় দান করেছেন, তার সুসংবাদ এই সুরায় দেওয়া হয়েছে।
বুখারি ও তিরমিজিতে আছে, হজরত উমর বিন খাত্তাব (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুল (সা.) বলেছেন, আজ সন্ধ্যায় আমার ওপর এমন এক সুরা অবতীর্ণ হয়েছে, যা দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু রয়েছে, সবার চেয়ে বেশি প্রিয়। এরপর তিনি সুরা ফাতহর কিছু আয়াত তেলাওয়াত করেন।
যুদ্ধের সময় গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে হজরত উসমান (রা.) শহিদ হয়েছেন। রাসুল (সা.) তখন গাছের নিচে বসে কাউকে না পালাতে এবং মক্কার কাফেরদের মোকাবেলায় নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করতে শপথ করাচ্ছিলেন। উসমান (রা.)–র নিহত হওয়ার সংবাদটি পরে ভুল প্রমাণিত হয়। এরপর দুই পক্ষে আলোচনা শুরু হয়। কুরাইশদের পক্ষ থেকে আসে সুহাইল বিন আমর। সেখানে যে চুক্তি হয়, সেটিই ঐতিহাসিক হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। চুক্তিতে বলা হয়, দুই পক্ষ দশ বছর নিজেদের মধ্যে কোনো যুদ্ধে জড়াবে না। শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে জীবনযাপন করবে।
চুক্তির কয়েকটি ধারায় আপাতদৃষ্টিতে মুসলমানদের দুর্বল বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু আল্লাহ একে ফাতহুম মুবিন বা সুস্পষ্ট বিজয় বলে উল্লেখ করেন। এই বক্তব্য কিছু মুসলমানের তখন বোধগম্য হয়নি। পরবর্তী পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে প্রকৃতপক্ষেই চুক্তিটি ছিল সুস্পষ্ট বিজয়। হুদাইবিয়ার সময় মুসলমানর সংখ্যা ছিল ১,৪০০। এর মাত্র দু বছর পরই অষ্টম হিজরিতে মক্কাবিজয়ের সময় রাসুল (সা.)–এর নেতৃত্বাধীন বাহিনীতে মুজাহিদের সংখ্যা হয় দশ হাজার। শান্তিচুক্তির ফলে এ বিপ্লব সাধিত হয়েছিল।
চুক্তির পর তারা মুসলমানদের সঙ্গে ওঠাবসা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করার সময় তারা মুসলমানদের সততা ও চারিত্রিক পবিত্রতা লক্ষ করে। কোন অভূতপূর্ব শক্তি দোষত্রুটিতে ভরা মানুষগুলোকে এমন চরিত্রবান করে তুলল, সেটা তারা ভাবতে বাধ্য হলো। তারা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করল।
সুরা ফাতহের ২৯ নম্বর আয়াতে সাহাবিদের কয়েকটি গুণের উল্লেখ রয়েছে। এসব গুণের কথা তাওরাত ও ইঞ্জিলেও আছে। গুণগুলো হলো: ১. তাঁরা কাফেরদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর, ২. নিজের সম্প্রদায়ের প্রতি সহমর্মী, ৩. রুকু-সিজদায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নিয়োজিত, ৪. তাদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন দীপ্তিমান, ৫. তাঁদের দৃষ্টান্ত মাটি থেকে নির্গত কিশলয়ের মতো যা হৃষ্টপুষ্ট হয়ে কাণ্ডের ওপর দৃঢ়ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে কৃষকের জন্য আনন্দের কারণ হয়।