মক্কায় লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়
সৌদি আরবের স্থানীয় সময় তখন সকাল ১০টা। জুমার নামাজ শুরু হতে দুই ঘণ্টা বাকি। তখনই পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারামের দিকে ছুটছে মানুষের স্রোত। অসুস্থ বা দুর্বল ব্যক্তিরা হুইলচেয়ারে মসজিদের দিকে রওনা হয়েছেন। বিশ্বের নানা বর্ণের, গোত্রের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা জুমার নামাজ আদায় করেন। সুরা ফাতেহা পাঠের পর আমিন আমিন ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
জুমার নামাজের তিন ঘণ্টা আগেই মসজিদুল হারামের চারপাশের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুক্রবার সৌদি আরবে ছুটির দিন। তাই গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর মক্কা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে মসজিদুল হারামের উদ্দেশে রওনা হন অনেকে।
মসজিদুল হারামে প্রবেশের জন্য ছোট-বড় শতাধিক পথে ছিল কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। প্রতিটি পথে পুলিশ তল্লাশি করেছে। যাঁদের সঙ্গে ব্যাগ ছিল, সেই ব্যাগ পরীক্ষার পর প্রবেশের অনুমতি মিলেছে। যাঁদের সঙ্গে বড় ব্যাগ ও ক্যামেরা ছিল, তাঁদের নামাজ আদায় করতে হয়েছে বাইরে। কারণ, এসব নিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
কয়েকজন হজযাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফজরের নামাজ পড়েই কাবা শরিফের কাছাকাছি অপেক্ষা করেছিলেন তাঁরা। এ কারণে তাঁদের অনেকেই প্রথম কাতারে ইমামের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করতে পেরেছেন।
মসজিদুল হারামের ইমাম শাইখ উসামা বিন আবদুল্লাহ খাইয়্যাত নামাজে ইমামতি করেন। খুতবা শোনার জন্য মসজিদের বাইরে পর্যাপ্তসংখ্যক মাইক ও সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করা হয়। খুতবায় মক্কা শরিফের মর্যাদা, কাবা শরিফ, হাজরে আসওয়াদ ও জমজমের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে বিশ্বের সব মানুষের জন্য দোয়া করা হয়।
জুমার নামাজ আদায়ের পর কথা হয় ঢাকার মিরপুর–১০ থেকে আগত মো. নুরুল আমিন মিয়ার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুকরিয়া জানাই আল্লাহর কাছে। এত বড় জামাতে জুমার নামাজ আদায় করেছি। এভাবে হজের কাজগুলোও যেন ভালোভাবে আদায় করতে পারি।’
নামাজ শেষে কয়েকজনের জানাজা হয়। পবিত্র হজ পালন করতে এসে প্রিয়জনদের ছেড়ে গেছেন তাঁরা। আবার অন্যদিকে পরম সৌভাগ্যবান যে পবিত্র কাবা শরিফে জুমার নামাজ শেষে লাখো মুসল্লি তাঁদের জানাজায় শরিক হয়েছেন। সমাহিত হবেন পবিত্র মক্কার মাটিতে।
ঢাকার পরীবাগ এলাকার বাসিন্দা সাফফাত রেজা স্ত্রীসহ হজ পালন করতে এসেছেন। কাবা শরিফে জুমার নামাজ আদায়ের পর তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে বড় জামাতে জুমার নামাজ আদায় করলাম। এত বড় জামাতে শরিক হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’
কাবা শরিফ, মাতাফ (তাওয়াফের স্থান), বেজমেন্ট, নিচতলা, একতলা, দোতলা, ছাদ—সব ছিল কানায় কানায় ভরা। কাবা শরিফের আশপাশের রাস্তাও ছিল মুসল্লিতে পূর্ণ। মিসফালা এলাকার (কবুতরের মাঠ) অনেক বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সেসব খালি স্থানেও জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।