আসছেন মা দুর্গা
সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা সমাগত। দিনপঞ্জিকার হিসাবে এ বছর দুর্গাপূজা এবার বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে। দুর্গাপূজা শুরু হতে চলেছে ২০ অক্টোবর। সেদিন মহাষষ্ঠী। তার আগে ১৪ অক্টোবর ছিল মহালয়া, যেদিন সূচনা হয় দেবীপক্ষের।
দুর্গার আগমন, প্রস্থানের বাহন ও তার ফলাফল নিয়ে বাঙালি সমাজে বহু কথা প্রচলিত আছে। দেবী দুর্গা ও তাঁর পুত্র-কন্যার নিজস্ব বাহন থাকলেও আগমন ও প্রস্থানের বাহনের কথা আলাদা করে পঞ্জিকায় উল্লেখ করা থাকে। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, দুর্গার আগমন ও প্রস্থানের বাহন নির্ধারণ করে মর্ত্যলোকে সারা বছর কেমন যাবে। প্রতিবছর দুর্গার আগমন ও প্রস্থান সাধারণত একই বাহনে হয় না। যদি কোনো বছর তেমন হয়‚ তাহলে তা খুবই অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। এ বছর দুর্গার আসা ও যাওয়া, দুটোই হবে ঘোড়ায়। ফলে আগামী এক বছর অশুভ প্রভাব থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পঞ্জিকা অনুসারে পূজার সপ্তমীতে দেবীর আগমন হয় আর গমন হয় দশমীতে। এই দুই দিন সপ্তাহের কোন কোন বারে পড়ছে, তার ওপরই নির্ভর করে দেবীর কিসে আগমন ও কিসে গমন। শাস্ত্র অনুযায়ী সপ্তমী রবি বা সোমবারে হলে দেবীর বাহন হবে গজ বা হাতি। সপ্তমী শনি বা মঙ্গলবারে হলে দেবীর বাহন হবে ঘোটক বা ঘোড়া। সপ্তমী বৃহস্পতি বা শুক্রবারে হলে দেবীর বাহন দোলা বা পালকি। সপ্তমী বুধবারে হলে দেবীর বাহন নৌকা। একইভাবে, দশমী রবি বা সোমবার হলে দেবীর বাহন গজ। দশমী শনি বা মঙ্গলবার হলে দেবী বিদায় নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। দশমী বৃহস্পতি বা শুক্রবারে হলে দেবীর গমন হবে দোলা বা পালকিতে। আর দশমী বুধবারে হলে নৌকায় করে কৈলাসে ফিরবেন দেবী।
এ বছর ২১ অক্টোবর সপ্তমী পড়েছে শনিবার। তাই দুর্গার আগমন ঘোটক অর্থাৎ ঘোড়ায়। ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার পড়েছে বিজয়া দশমী। মা দুর্গা পুত্র–কন্যাসহ কৈলাসে ফিরবেন ঘোড়ার পিঠে আসীন হয়ে। শাস্ত্রমতে, দুর্গা যদি ঘোড়ায় চড়ে আসেন বা বিদায় নেন, তাহলে তার ফল ‘ছত্রভঙ্গ স্তুরঙ্গমে’, অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে রাজায়-রাজায় বা রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে যুদ্ধ সূচিত হয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্তরে ধ্বংস ও অস্থিরতা বিরাজ করে। এককথায় ‘ছত্রভঙ্গে’।
কোন বাহন কিসের প্রতীক
দোলা: দোলা অর্থাৎ পালকি হলো মহামারি বা মরকের প্রতীক।
নৌকা: নৌকা বন্যার প্রতীক। আবার অনেকে মনে করেন, নৌকায় দেবী দুর্গার আগমন হলে ফসল ভালো হয়।
গজ: গজ বা হাতি হলো শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। গজে আগমন বা গমন হলে বসুন্ধরা শস্যশ্যামলা হয়।
ঘোটক বা ঘোড়া: ঘোটকের অর্থ ছত্রভঙ্গ। ঘোটক বা ঘোড়ার অর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির এলোমেলো অবস্থা। যুদ্ধ-বিগ্রহ, অশান্তি, বিপ্লব ইত্যাদির সংকেত।