নানা আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্যাপিত হচ্ছে
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সারা দেশে উদ্যাপিত হচ্ছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসের বর্ষাবাস সমাপনীতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্যাপন করেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধপূজা, সংঘদান, পিণ্ডদান, অষ্টপরিষ্কার দান, শীল গ্রহণ, প্রদীপপূজা ও ফানুস ওড়ানোর মতো নানা আচার পালনের মধ্য দিয়ে দিন উদ্যাপন করছেন দেশের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের মহাসচিব বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, শুভ প্রবারণা পূর্ণিমার আনুষ্ঠানিকতার একটি পর্ব হচ্ছে পঞ্চশীল প্রার্থনা। এর মূল বিষয়গুলো হলো প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকা। চুরি করা যাবে না। অবৈধ কামাচার থেকে বিরত বা নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। মিথ্যা বলা যাবে না। মদ-গাঁজা সেবন করা যাবে না। তবে মানুষের মনে যখন লোভ ঢুকে যায়, তখন মন থেকে ধর্মের ভয় চলে যায়। তাই পৃথিবীতে এত হানাহানি, মারামারি। শুধু কেউ যদি প্রাণী হত্যা করা যাবে না—এর মর্মবাণী উপলব্ধি করতে পারে, তখন তার মধ্যে জীবের প্রতি দয়া, ভালোবাসা জন্ম নেবে। মানুষের মনে এ উপলব্ধি জাগাতে পারলেই জীবন সুন্দর হবে।
শুভ প্রবারণা উৎসব পালনের গভীরতা বোঝাতেই কথাগুলো বলেন বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া। তিনি আরও বলেন, শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা প্রতিটি বিহারে উদ্যাপিত হয়। জনগণ এ উৎসবে অংশ নেন। দান করেন, মানুষকে খাওয়ান।
সংস্কৃত ‘পবারণা’ শব্দ থেকে প্রবারণা শব্দের আবির্ভাব। যার অর্থ হলো ‘আশার তৃপ্তি’ ‘অভিলাষ পূরণ’ শিক্ষা সমাপ্তি অথবা ধ্যান শিক্ষা সমাপ্ত। প্রবারণা বরণ অর্থে যা কিছু সুন্দর, সৎ, যথার্থ, বিজ্ঞজন সর্বোপরি বুদ্ধমোদিত সে রকম কাজকে বরণ করা এবং এগুলো নিজের জীবনে মেনে চলা। বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসীরা এগুলো মেনে চলার চেষ্টা করেন।
রাজধানীর মিরপুরের শাক্যমুনি বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো প্রথম আলোকে বলেন, প্রবারণা হলো আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের অনুষ্ঠান। আষাঢ়ী পূর্ণিমায় বৌদ্ধভিক্ষুরা তিন মাসের জন্য বর্ষাবাস শুরু করেন, যা আশ্বিনী পূর্ণিমায় অর্থাৎ আজ শেষ হচ্ছে। আগামীকাল সোমবার কঠিন চীবরদান শুরু হবে।
প্রথম আলোর বান্দরবান প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জগতের সব প্রাণীর শান্তি কামনা করে পঞ্চশীল গ্রহণ, উপাসনাসহ ধর্মীয় বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় বান্দরবানে চলছে প্রবারণা উৎসব বা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে। শত শত ধর্মপ্রাণ উপাসকের উপস্থিতিতে বিহারগুলো উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ফানুস ওড়ানো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তিন দিনের উৎসব শুরু হয়েছে। মাঙ্গলিক রথ শোভাযাত্রা ও বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হবে।
প্রবারণা পূর্ণিমায় বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে বুদ্ধপূজা, শীল গ্রহণ, অষ্টপরিষ্কারসহ মহাসংঘদান ও পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ, ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমার তাৎপর্য ও বিশ্বশান্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভা, প্রদীপপূজা, আলোকসজ্জা, ফানুস ওড়ানো এবং দেশের অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে বৌদ্ধ নেতাদের যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ‘প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান’ উপলক্ষে এই সম্প্রদায়ের নেতারা শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মহামতি গৌতম বুদ্ধের মহৎ শিক্ষা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতাদের যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি শান্তিপূর্ণ ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে বুদ্ধের এই চিন্তাধারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।