হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ চার দাবিতে আমরণ অনশনে রোকেয়া হলের পাঁচ শিক্ষার্থী
কারচুপির অভিযোগ থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল সংসদ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন, হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন হলের পাঁচ শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে চারজন বিভিন্ন প্যানেল থেকে হল সংসদে প্রার্থী ছিলেন। আজ বুধবার রাত নয়টা থেকে তাঁরা রোকেয়া হলের ফটকে অনশন শুরু করেন।
অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা হলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রাফিয়া সুলতানা, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সায়েদা আফরিন, একই বিভাগের জয়ন্তী রেজা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শ্রবণা শফিক দীপ্তি ও ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রমি খিশা।
রাফিয়া সুলতানা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেল থেকে রোকেয়া হল সংসদে সহসভাপতি (ভিপি), সায়েদা আফরিন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন থেকে হল সংসদে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস), শ্রবণা শফিক দীপ্তি স্বতন্ত্র জোট থেকে ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে আর প্রমি খিশা হল সংসদে সদস্যপদে ছাত্র ফেডারেশনের প্রার্থী ছিলেন। জয়ন্তী রেজা প্রার্থী ছিলেন না।
তাঁদের অন্য দুই দাবি হলো ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীসহ ৭ জন ও অজ্ঞাতনামা ৪০ জনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং আন্দোলনে অংশ নেওয়া হলের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। রাত পৌনে ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রোকেয়া হলের ফটকে অবস্থান নিয়ে ছাত্রীদের অনশন চলছিল। পাশে তাঁদের সমর্থকেরা প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদার পদত্যাগসহ ওই চার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।
অনশনে অংশ নেওয়া সায়েদা আফরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোকেয়া হল সংসদে যে নির্বাচন হয়েছে, তা ছিল একটি প্রহসনের নির্বাচন। হল প্রশাসন নির্লজ্জভাবে ছাত্রলীগকে জিতিয়েছে। মঙ্গলবার রাতভর বিক্ষোভ করেও আমরা হল বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাইনি। শেষ পর্যন্ত অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছি।’
এর আগে একই দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত হলের ফটকের ভেতরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীদের এই অংশটি। আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত এই ছাত্রীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছেন তিনটি ছাত্রী হল সংসদের নির্বাচনে জয়ী হওয়া ২১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
জানতে চাইলে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিক্ষোভকারী ছাত্রীরা যেসব দাবি জানাচ্ছে, তা পূরণের এখতিয়ার আমার নেই। আমি কারও বিরুদ্ধে মামলা করিনি। অহেতুক মিথ্যা গুজব রটিয়ে মঙ্গলবার রাতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিক্ষোভকারী ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির পক্ষ থেকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা সহযোগিতা না করায় তাঁদের সঙ্গে বসতে পারেনি প্রক্টরিয়াল বডি।
রাজু ভাস্কর্যের সামনে অনশন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ডাকসুর পুনঃ তফসিল ও নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে দ্বিতীয় দিনেও অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। অসুস্থ হয়ে একজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন করে যোগ দিয়েছেন আরও তিনজন।
গতকাল সন্ধ্যা থেকে অনশনে বসেন চার শিক্ষার্থী। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও দুজন। রাত ১২টার দিকে রনি হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী অনশন ছেড়ে চলে যান। আর রাত দুইটার দিকে নতুন করে অনশনে যোগ দেন ভূতত্ত্ব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাহা আল মাহমুদ। রাতে ছয় অনশনকারীর ঘুমানোর জন্য কাঁথা ও কম্বল এনে দেন সহপাঠীরা। আজ বেলা তিনটার দিকে অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন অনিন্দ্য মণ্ডল। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
আন্দোলনের প্রতিবাদে অবস্থান
অনশনকারীদের পাশেই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশের সিঁড়িতে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে করা আন্দোলনের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন আট শিক্ষার্থী। প্ল্যাকার্ডে তাঁরা নিজেদের পরিচয় লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগ কর্মী ও ভোটার’। অবস্থানকারী সবাই স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তাঁরা বলছেন, এ এফ রহমান হলে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী ছিলেন তিনজন। ১৩টি পদের হল সংসদ নির্বাচনে তারা (বাম জোট) কীভাবে জয় আশা করে। অবস্থানকারীদের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ চাই, আপনাদের ভণ্ডামির নাটক বন্ধ করুন।’
রাসেল মিয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নির্বাচনের দিন দুপুরেই ছাত্রলীগ ছাড়া বাকিরা ভোট বর্জন করে। রাতে ফল ঘোষণার পর তাঁদের দুই প্রার্থী জিতলে ওই দুই পদের ফল মেনে নেয়। এটা হাস্যকর। ভণ্ডামি। এই ভণ্ডামির মানসিকতা নিয়ে বর্জনকারীরা আবার আন্দোলন করছেন। এমন ভণ্ড আন্দোলনের প্রতিবাদে আমাদের এ অবস্থান কর্মসূচি।’ বেলা একটা থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচি শেষ হয় রাত আটটায়।