হবিগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রতিবাদ

গানে গানে হবিগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রতিবাদ জানালেন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার চা-শ্রমিকেরা। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এ কর্মসূচি। ঢাকার সর্বপ্রাণ সাংস্কৃতিক শক্তি নামের একটি সংগঠন এতে সহযোগিতা করে।
সকাল ১০টা থেকে চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর চা-বাগান মাঠে ভূমি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় ‘প্রাণের পরব’। ‘আমার মাটি আমার মা, কেড়ে নিতে দেব না’ স্লোগানে আশপাশের ছয়-সাতটি চা-বাগানের কয়েক শ নারী-পুরুষ শ্রমিক কর্মসূচিতে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সদস্যদের ঝুমুর, কাটি, সাঁওতাল ও মুন্ডা নাচ এবং নাটক ও গানে গানে প্রতিবাদ জানানো হয়।
এ ছাড়া সকালে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিকেল চারটায় শুরু হয় প্রতিবাদ সভা। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননার মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। বক্তারা বলেন, হবিগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের জন্য প্রশাসন যে ভূমি বেছে নিয়েছে, তা স্থানীয় চা-শ্রমিকেরা যুগ যুগ ধরে কৃষিকাজে ব্যবহার করে আসছেন। এ ভূমি হাতছাড়া হয়ে গেলে তাঁদের জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে।
গতকালের সভায় বক্তব্য দেন স্বপন সাঁওতাল, লক্ষ্মীচরণ বাকতি, রিতা রানী কানুন, কাঞ্চন সমাজপতি, নৃপেন পাল প্রমুখ। এর আগে চা-শ্রমিকেরা বাগান এলাকায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিল করেন। এতে নারী-শিশুসহ বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
আদিবাসী নারী ফোরাম নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক রিতা রানী কানুন বলেন, ‘আমরা হলাম ৮৫ টাকার শ্রমিক। আমরা এ ভূমি ব্যবহার করে বছরে ৩০-৩৫ হাজার টাকা পাই। কাজেই আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল নয়, এ মাটির অধিকার চাই।’
ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক নৃপেন পাল বলেন, ‘আমরা দুই বছর ধরে এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। তারপরও প্রশাসন ও সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এটি গঠনের। আমরা রক্ত দেব, তবু এ ভূমি দেব না।’
ঢাকা সর্বপ্রাণ সাংস্কৃতিক শক্তির নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীমা লুৎফা বলেন, এ চা-ভূমি রক্ষার আন্দোলন জীবন-প্রাণ আর প্রকৃতিকে রক্ষা করবে। তাই তাঁরা গণমানুষের এ আন্দোলনে নিজেদের শরিক করেছেন।