কুষ্টিয়া-৪ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ আবদুর রউফ এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। গত পাঁচ বছরে নানা অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া এবং নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ার কারণে তাঁর কপাল পুড়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূল কর্মীরা।
আবদুর রউফ মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর সমর্থকেরা নাখোশ হলেও খুশি দুই উপজেলার অনেক শীর্ষ নেতা–কর্মী। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন রউফ।
এ ছাড়া কুষ্টিয়া-১ আসনেও বর্তমান সাংসদ ও দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল হক চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ আফাজ উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
দলীয় নেতা–কর্মীরা জানান, ২০১৪ সালের নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসনে তৎকালীন সাংসদ সুলতানা তরুণকে হটিয়ে মনোনয়ন পেয়ে যান বহিষ্কৃত নেতা আবদুর রউফ। দলের বিরোধিতার পরও বিশেষ তদবিরে মনোনয়ন পান তিনি। তবে নির্বাচনের সময় দলের কেউ তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দীন খান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পরও দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। নানা অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে রউফের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় দুই উপজেলার দলীয় নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে মাঠে নামেন। এসব কারণে একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও মনোনয়ন পেতে জোর প্রচেষ্টা চালান রউফ। তবে তাঁকে হটিয়ে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান গোলাম কিবরিয়ার দৌহিত্র সেলিম আলতাব জর্জ।
দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রউফের সমর্থকেরা গোপনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। গত বুধবার শেষ দিনে শেষ সময়ে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মদন কুমার কর্মকার ও তাঁর খালাতো ভাই আলতাফ হোসেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
রউফের ঘনিষ্ঠ দুই আত্মীয় প্রথম আলোকে বলেন, রউফ মনোনয়ন না পাওয়ায় কষ্ট পেয়েছেন। তিনি এখনো জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। ভারতেরই শীর্ষ এক রাজনীতিবিদের তদবিরে দশম সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। এবার সেই তদবিরের জন্যই তিনি ভারতে গেছেন। রউফের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান খান বলেন, বর্তমান সাংসদের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের দূরত্ব ছিল, এটা সত্য। তবে দল সেলিম আলতাবকে মনোনয়ন দিয়েছে। সবাই এখন তাঁর পক্ষে মাঠে নেমেছেন।
কুষ্টিয়া-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বর্তমান সাংসদ রেজাউল হক চৌধুরী ও সাবেক সাংসদ আফাজ উদ্দিন আহমেদ। আফাজ উদ্দিন ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৪ সালেও দলীয় মনোনয়ন পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। এবার মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আ ক ম সরওয়ার জাহান। সরওয়ার মনোনয়ন পাওয়ায় এই দুই সাংসদের সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ।
সাংসদ রেজাউল হক চৌধুরী বলেন, ‘মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ ডিসেম্বর। কিছু আসনে পরিবর্তন হতে পারে। এ সুযোগে আমরা মাঠে আছি, মনোনয়ন জমা দিয়েছি।’
আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘এখনো সময় আছে। যদি দল থেকে কোনো পরিবর্তন হয়, সে আশায় আছি। তবে দলের সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব।’