স্বজনদের সঙ্গেই সময় কাটে খালেদা জিয়ার
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গত এক বছরে অবনতি হয়েছে বলে জানালেন তাঁর চিকিৎসক। গুলশানে ‘ফিরোজা’ নামের যে বাড়িটিতে তিনি এখন থাকেন, সেটি দোতলা একটি বাড়ি। মূল ফটক ও দেয়ালের ওপর কাঁটাতারের বেড়া।
গুলশান এলাকায় এক রিকশাচালককে বাড়ি ও সড়কের নাম বলতেই জিজ্ঞেস করলেন আগের প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি যাবেন? বাড়িটির উল্টো দিকেই রুশ দূতাবাস।
গত বছরের ২৫ মার্চ শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির পর থেকে ফিরোজাতেই আছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু তাঁকে বাড়ির ছাদ বা আঙিনায় কখনো দেখা যায়নি। ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে গিয়ে কথা হলো দুই নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে। তাঁরা বললেন, মাঝেমধ্যে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই, বোন, কিংবা ভাইয়ের স্ত্রী আসেন দেখা করতে। এ ছাড়া আসেন চিকিৎসকেরা। দলীয় কোনো নেতা-কর্মীদের দেখা যায় না এখানে।
কেমন আছেন খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় চার–পাঁচজনের একটি মেডিকেল টিম রয়েছে। তাঁর শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়মিতভাবে তত্ত্বাবধান করেন যে কজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক, তাঁদের একজন অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এক বছরে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। কারও সাহায্য ছাড়া চলাফেরা বা নিজের কোনো কাজই করতে পারেন না।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, চোখের প্রদাহ, হৃদ্রোগ সমস্যাসহ নানা রকম শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁরা দেখা করতে যেতে পারেন না। কেবল দুই ঈদের সময় দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয় তাঁদের।
কেউ তাঁদের বাধা দেন কি না জানতে চাইলে এই নেতা জানান, শর্তে যেহেতু লেখা আছে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়, সে কারণে তাঁরা যেতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে পরামর্শ, বক্তব্য দিতে পারেন না। কারণ, শর্তে লেখা আছে, উনি রাজনীতি করতে পারবেন না। পরিবারের সদস্য ছাড়া কারও সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। সে জন্য এক বছর ধরে তাঁর রাজনৈতিক কোনো মন্তব্য বা বিবৃতি নেই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, তৃণমূলের কর্মীরা চান সব কর্মকাণ্ডে নেত্রী অংশগ্রহণ করুন। তাঁরা নেত্রীর কথা শুনতে চান। দল চায়, তাঁর মুক্তিতে আরোপ করা শর্ত তুলে নেওয়া হোক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত কারাগারে পাঠান। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী থাকার পর করোনা পরিস্থিতিতে শর্ত সাপেক্ষে তাঁকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালে। পরে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়, যার সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা আগামী ২৪ মার্চ। তার আগেই পরিবারের পক্ষ থেকে আবার আবেদন করা হবে বলে বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন।
সরকার যা বলছে
খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য দরখাস্ত করা হলে সে ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনা করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে বিএনপি নেত্রীকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য স্থায়ী মুক্তির যে দাবি দলের পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর (খালেদা জিয়ার) সাজা স্থগিত রাখা হয়েছে। তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কোনো আবেদন করা হয়নি। তাঁর সাজা স্থগিত করার জন্য এর আগে তাঁরা যেভাবে আবেদন করেছিলেন, তা বিবেচনা করেছে সরকার। সেভাবে আবার দরখাস্ত করা হলে বিবেচনা করা হবে।