সাকা পরিবারের প্রার্থী নিয়ে বিএনপিতে বিরোধ

ফয়সল মাহমুদ, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, খুরশিদ জামিল চৌধুরী ও ফরহাত কাদের চৌধুরী
ফয়সল মাহমুদ, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, খুরশিদ জামিল চৌধুরী ও ফরহাত কাদের চৌধুরী

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপিতে দুটি পক্ষ সক্রিয়। একটি পক্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া বিএনপির প্রয়াত নেতা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পরিবারের অনুসারী। আরেকটি পক্ষ সাকা পরিবারের বিরোধী। আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের এই বিভক্তি আরও প্রকট হচ্ছে। ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম-২) আসনে দল থেকে মনোনয়ন পেতে এখন পর্যন্ত তিনজনের কথা শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফয়সল মাহমুদ ফয়েজী, চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন খুরশিদ জামিল চৌধুরী ও সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী। 

সর্বশেষ ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রাউজানের বাসিন্দা সাকা চৌধুরী জয়ী হন। তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। প্রায় ১৭ বছর পর (১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ছাড়া) বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধার করেছিল। ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বরে সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর ফটিকছড়িতে বিএনপির কার্যক্রম কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে বলে তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা জানান।
উপজেলা বিএনপির একটি অংশ আগামী নির্বাচনে ফটিকছড়ির স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে কাউকে এই আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি তুলেছে। অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির আরেকটি অংশ সাকার পরিবারের কাউকে এই আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। সাকার স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী, ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাম প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করেছে এই অংশটি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফয়সল মাহমুদ ফয়েজী দীর্ঘদিন ধরে ফটিকছড়িতে যোগাযোগ বজায় রাখছেন। তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। সনদ জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পর বিচারকের পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর তিনি নিজের এলাকায় যোগাযোগ বাড়ান। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এলাকায় চলে যান নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক ও গণসংযোগ করতে। তাঁর বাবা ছিলেন রাষ্ট্রদূত। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তাঁর মামা। এলাকায় ফয়েজীর নিজস্ব অনুসারী রয়েছেন।
ফয়সল মাহমুদ ফয়েজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৮ সালে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। চৌধুরী (সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী) সাহেবের অনুরোধে আমি তাঁকে সমর্থন করে প্রার্থিতা ছেড়ে দিই। কিন্তু পরের নির্বাচনে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আমাকে বিএনপির প্রার্থী করবেন বলে বলেছিলেন। আগামী নির্বাচনে আমি ফটিকছড়িতে বিএনপির মনোনয়ন পাব বলে আশা করছি। কারণ ম্যাডাম যা বলেন, সেই প্রতিশ্রুতি নড়চড় করেন না।’
ফয়েজী বলেন, আগামী নির্বাচনে ফটিকছড়ি আসনে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাউকে মনোনয়ন দিতে হবে। যদিও চৌধুরী সাহেবের এক ভাই (গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী) ফটিকছড়িতে পাল্টা কমিটি দিয়ে বিএনপিকে বিভক্ত করে রেখেছেন। এই আসনে প্রার্থী হতে তাঁর বাসনা থাকতে পারে। বাইরের কাউকে প্রার্থী করা হলে এলাকাবাসী তা মেনে নেবে না।
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর (ফয়েজী) সমর্থন বা বিরোধিতায় কিছু যায় আসে না। ফটিকছড়ি আসনে আমার ভাবি (ফরহাত কাদের চৌধুরী) এবং আমি মনোনয়নপত্র জমা দেব। সেখান থেকে বিএনপির হয়ে আমাদের মধ্যে কে নির্বাচন করবেন, তা আমরা পারিবারিকভাবে বসে সিদ্ধান্ত নেব।’
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সমর্থিত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. সরোয়ার আলমগীর দাবি করেন, ফটিকছড়িতে বিএনপিতে কোনো কোন্দল নেই। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী পরিবারের সঙ্গে রয়েছেন নেতা-কর্মীরা। তবে কিছু লোক বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অন্য দলের দালালি করছে। আগামী নির্বাচনে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের যেকোনো এক সদস্য বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ফটিকছড়িতে নির্বাচন করবেন।
তবে দলের যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী সমর্থিত ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আরেক অংশের আহ্বায়ক মো. সালাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কমিটিকে জেলা অনুমোদন দিয়েছে। অন্য গ্রুপটি ভুয়া।’ তাঁর দাবি, রাউজানের একটি পরিবার নিজেদের ইচ্ছামতো ওই ভুয়া কমিটি করে। তবে খালেদা জিয়া যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, তাঁর জন্য সবাই কাজ করবেন।
বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সিভিল সার্জন খুরশিদ জামিল চৌধুরীও মাঠে আছেন। দলীয় কর্মকাণ্ডে তাঁর অংশগ্রহণ বেড়ছে। ফটিকছড়িতেও গণসংযোগ বাড়িয়েছেন। তিনিও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। সাবেক মন্ত্রী বিএনপির প্রয়াত নেতা এল কে সিদ্দিকী তাঁর মামা।
খুরশিদ জামিল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার আশায় দীর্ঘদিন মাঠে আছেন। গণসংযোগও করছেন। প্রার্থী নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন তিনি।