সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা না-করা নিয়ে দোটানা
ক্যাসিনো–কাণ্ডে আলোচিত–সমালোচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না, তা নিয়ে দোটানায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যদিও তিনি এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতেই রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সম্রাটের সুবিধাভোগীদের তালিকায় মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনীতিবিদ, পুলিশ, সাংবাদিকসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তিই আছেন। এ কারণে তাঁকে গ্রেপ্তারে ইতস্তত করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁকে কোনো মামলায় আসামিও করা হয়নি। অনেকে বলছেন, সম্রাট গ্রেপ্তার না–ও হতে পারেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অগ্রগতি তাঁকে জানানো হবে। এরপর তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কাকরাইলে নিজের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে নিরাপদ অবস্থানে গিয়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন সম্রাট। তিনি পরিবার ও দলীয় লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। দুদিন আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। তবে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার অভিযান শুরুর পর ১৩ দিন পার হলো। কিন্তু অভিযানের ব্যাপ্তি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছেন না। গোয়েন্দা পুলিশ একটি মামলার তদন্ত করছে। বাকি ১৬টি মামলার তদন্ত করছে র্যাব।
তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার করা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনো কোনো তথ্য প্রকাশ করার পর্যায়ে নেই। তদন্তে সম্রাটের নাম আছে কি না বা তাঁকে আটক করা হবে কি না, প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখন সবই তদন্ত পর্যায়ে আছে। আগাম কিছু বলা ঠিক হবে না।
ক্লাবপাড়ার একাধিক সূত্র জানায়, মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় মোহামেডান, আরামবাগ, দিলকুশা, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া ও ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে নিয়মিত ক্যাসিনো ছিল। ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্য পাঁচটি ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন সম্রাটের লোকজন। সেখান থেকে প্রতি রাতে লাখ লাখ টাকা আয় হতো। সেই টাকার ভাগ যেত বিভিন্ন মহলে। কিছু পুলিশ সদস্যও এসব টাকার ভাগ পেতেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ক্যাসিনো–কাণ্ডে জড়িত পুলিশ সদস্যদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। গোপনে এই তালিকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ক্যাসিনো-কাণ্ডে যাঁদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তাঁরাই সম্রাটের নাম বলছেন। তাঁর সহযোগী হিসেবে নাম আসছে যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কাউন্সিলর ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক ওরফে সাঈদ, যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক ওরফে আরমানসহ আরও কয়েকজনের। এর মধ্যে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা জি কে শামীম, কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম ও মোহামেডান ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ছাড়া উল্লেখযোগ্য কেউ গ্রেপ্তার হননি।