‘সত্যবচনের’ বর্ষপূর্তিতে কাদের মির্জা বললেন, ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলাটা ভুল ছিল
বছরখানেক ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের সমালোচনা করে আলোচনায় ছিলেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের আবদুল কাদের মির্জা। এখন তিনি বলছেন, তাঁর সবচেয়ে ভুল হয়েছে বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে কথা বলা।
আজ মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে এ কথা বলেছেন আবদুল কাদের মির্জা।
তিনি বলেন, ‘মানুষ ভুল করবে, এটাই স্বাভাবিক; কেউ ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। গত এক বছরে আমার সবচেয়ে যে ভুল ছিল, তা হলো আমি আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। বাংলাদেশে একজন সফল, সৎ রাজনীতিবিদ জননেতা ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আমি সত্যি অনুতপ্ত।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা। ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়ি ও নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র তিনি।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এই পৌরসভা নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণার সময় গত জাতীয় নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগসহ আওয়ামী লীগ ও দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে অপরাজনীতির অভিযোগ তুলে আলোচনায় আসেন কাদের মির্জা। এরপর তাঁর ওই কথাকে ‘সত্যবচন’ অভিহিত করেন অনেকে। তবে এতে কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভক্তি দেখা দেয়। এর জেরে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়।
সাংবাদিকসহ প্রাণ হারান দুজন। আহত হন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী। জাতীয় রাজনীতিতেও কাদের মির্জার কথাবার্তা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়।
রাত ৮টা থেকে ৮টা ২০ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড পর্যন্ত ফেসবুক লাইভে কথা বলেন কাদের মির্জা। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ৯ নভেম্বর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘোষণা করি, আমি যত দিন বেঁচে থাকব, অন্যায়, অবিচার ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলব। সেই সত্যবচনের ব্রত নিয়ে দীর্ঘ একটি বছর পার করলাম।’ তিনি বলেন, ‘ভালো কাজে প্রতিবন্ধকতা থাকবে, এটা স্বাভাবিক। আবার সৎ থাকলে ভয় পেতে হয় না, এটাও ধ্রুব সত্য। সফলতার বিপরীতে আমি ব্যর্থতা না বলে প্রতিবন্ধকতা বলব। কেননা আমি বিশ্বাস করি, কোনো ভালো কাজ সততার সঙ্গে করলে কেউ ব্যর্থ হয় না। তাই বিগত এক বছরে আমার সফলতা ও প্রতিবন্ধকতার কথা বলব।’
ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য অনুতপ্ত জানিয়ে আবদুল কাদের মির্জা আরও বলেন, ‘আমার সফলতার কথা বললে প্রথমেই বলতে হয় আমার নির্বাচনের কথা। আমার সত্যবচনের যে দাবিগুলো ছিল, তার অন্যতম ছিল অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। কীভাবে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে কথা বলে আমি নিজের নির্বাচনকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম।’
কাদের মির্জা বলেন, ‘আমার সত্যবচনে যে কয়েকটি অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপরাজনীতির কথা বলেছিলাম, তার সবকিছুর হোতা একরামুল করিম চৌধুরীর ক্ষমতা কিছুটা খর্ব হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও জননেতা ওবায়দুল কাদের আমাদের দাবি অনুযায়ী একরামকে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু একটা কথা না বললেই নয়, নোয়াখালীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ছাড়া অন্য কেউ নোয়াখালীর রাজনীতির ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করলে তা হবে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলব, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে কেউ লিপ্ত হবেন না।’
কাদের মির্জা বলেন, ‘সাহস করে সত্য বলার এই সংগ্রামে দেখলাম, বর্তমানে বাংলাদেশে দুর্নীতিমুক্ত কোনো মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগ নেই। প্রায় সব কটি দপ্তরই কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত হলো পুলিশ প্রশাসন। আমার প্রতিবাদের পর দুর্নীতিগ্রস্ত সাবেক সেতুসচিব বেলায়েতের এক্সটেনশন (মেয়াদ বৃদ্ধি) না হওয়াও দুর্নীতিবাজ আমলাদের জন্য একটি হুঁশিয়ারি সংকেত। এ ছাড়া বর্তমানে নোয়াখালীতে টেন্ডারবাজি কিছুটা কমেছে। কিন্তু টেন্ডারের সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি চুল পরিমাণও কমেনি।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির যে সংস্কৃতি বাংলাদেশে চালু হয়েছে, তা বন্ধ করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমে দুর্নীতি দমন কমিশনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের দিয়ে কমিশন গঠন করে একে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। তবেই একে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব হবে।’
মাদকের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার শূন্য–সহিষ্ণুতার নীতি প্রসঙ্গে কাদের মির্জা বলেন, দলের নেতা নির্বাচনে এবং জনপ্রতিনিধি নির্বাচনেও ডোপ টেস্টের (মাদকের পরীক্ষা) ব্যবস্থা থাকতে হবে।