জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। এ জন্য তিনি একটি প্রস্তাবও তুলে ধরেছেন। তাতে বলা হয়েছে, বিদ্যমান ৩০০ সংসদীয় আসনের ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। কিন্তু ভোটাররা সরাসরি দলকে ভোট দেবেন, প্রার্থীকে নয়। কোনো দল ১ শতাংশ ভোট পেলে তিনটি সংসদীয় আসন পাবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে জাপার অষ্টম সম্মেলনে এরশাদ তাঁর এই প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখন যে পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন হয় তাতে সব সময় সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না। নির্দিষ্ট প্রার্থী থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অর্থ-বিত্ত, সন্ত্রাসের দাপট নির্বাচনের ফলে প্রভাব ফেলে। এগুলো প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রেও বিবেচ্য হয়। তাই বর্তমান পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন করা দুরূহ।
কাউন্সিলে দলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন মেয়াদে এরশাদকে চেয়ারম্যান, এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও ছোট ভাই জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। পাশাপাশি দলের গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনায় দল গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য রওশনকে প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ারম্যানের মর্যাদা দেওয়া হয়। আর দলের মহাসচিব হয়েছেন এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। দলের নির্বাচন কমিশনের সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলাম পদগুলোতে এই চারজনের নাম প্রস্তাব করলে কাউন্সিলররা তা সমর্থন করেন। কমিটির বাকি পদগুলো পূরণের ক্ষমতা চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে।
কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। এর একটিতে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান প্রয়োজন মনে করলে দলে নতুন পদ তৈরি করতে পারবেন। এর ফলে চেয়ারম্যান হিসেবে দলে এরশাদের ক্ষমতা আরও বেড়েছে।
প্রথম অধিবেশনে এরশাদ তাঁর বক্তৃতায় দাবি করেন, ১৯৮৪ সালে নির্বাচন দিয়ে তিনি ব্যারাকে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। সে নির্বাচনে দলগুলো অংশ নিলে জাপা সৃষ্টির প্রয়োজন হতো না। তারপর ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে’ জাতীয় পার্টির জন্ম হয়।
দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ যাঁরা বিভিন্ন সময়ে জাপা ছেড়ে চলে গেছেন তাঁদের দলে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আপনারা ফিরে আসুন। আপনাদের আমরা গ্রহণ করব, সম্মানিত করব। আমরা অধীর আগ্রহে আপনাদের অপেক্ষা করছি।’
সম্প্রতি চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতায় দলের মহাসচিব পরিবর্তন ও নিজের ছোট ভাই জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করা নিয়ে রওশনের সঙ্গে এরশাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। এরশাদের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রওশনপন্থীরা। তবে গতকালের কাউন্সিলে রওশনের পাশাপাশি তাঁর পক্ষের নেতা হিসেবে পরিচিত আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলুও উপস্থিত ছিলেন।