আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের নেতা-কর্মীদের মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শুধু উন্নয়ন করলে হবে না, উন্নয়নের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সম্মান করতে হবে, ভালো ব্যবহার করতে হবে।
আজ রোববার দুপুরে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ জনসভার প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে যে সম্মান দেখিয়েছেন, আওয়ামী লীগও উন্নয়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সম্মানের উপযুক্ত প্রতিদান দেবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদেরের আরও পরামর্শ, ‘অসুখে-বিসুখে সাহায্য করতে হবে। না হয় উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে। একজন মানুষ তিনি যদি আওয়ামী লীগের নাও হন, তাঁর বিপদে এগিয়ে যেতে হবে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।’
কাদের বলেছেন, বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির কারণে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করেছে। একমাত্র বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির কারণে সাধারণ মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ ওয়ালী উল্যাহ। জনসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলী, স্থানীয় সাংসদ আয়েশা ফেরদাউস ও হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ। সভা পরিচালনা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, হাতিয়ায় আওয়ামী লীগের মধ্যকার বিবেদ, মারামারি ছিল ঢাকার সংবাদপত্রের প্রতিদিনের শিরোনাম। এখন এখানে ঐক্যের সুবাতাস বইছে। এই ঐক্য করতে বাহির থেকে কেউ আসতে হয়নি, হাতিয়ার নেতারাই নিজেদের বিভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, নৌকাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করেছেন। তাই এখন আর হাতিয়ার উন্নয়ন থেমে থাকবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশে হাতিয়া অন্ধকারে থাকতে পারে না। তিনি হাতিয়ায় এসেই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন, তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাতিয়ার বিদ্যুৎব্যবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেবেন। কাদের বলেন, হাতিয়ার প্রধান সমস্যা নদী ভাঙন রোধে ইতিমধ্যে ব্লকবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
সেতুমন্ত্রী হাতিয়ার প্রধান সড়ককে (নলচিরা-জাহাজমারা) ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুটে উন্নীত করার ঘোষণা দেন এবং এ বিষয়ে শিগগির প্রকল্প জমা দেওয়ার জন্য উপস্থিত প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া এলাকার অন্যান্য গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি নিঝুম দ্বীপকে আধুনিক পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
ভাঙন এলাকা পরিদর্শন:
এর আগে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হাতিয়ার ভাঙনকবলিত নলচিরা এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি নলচিরা ঘাট এলাকায় দুস্থদের মাঝে বস্তু বিতরণ করেন। এ ছাড়া মন্ত্রী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নবনির্মিত বাংলো উদ্বোধন এবং এ এম উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। মন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় এ এম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমান পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস, জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াস শরীফসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
মন্ত্রীর আসায় নতুন সাজে হাতিয়া:
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের হাতিয়া আগমন উপলক্ষে আজ নতুন করে সাজে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের পুরোনো ক্যাম্পাস মাঠে মন্ত্রীর হেলিকপ্টার অবতরণ স্থান থেকে শুরু করে এ এম উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা পর্যন্ত প্রায় দশ কিলোমিটার সড়কে দুই মন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে তৈরি করা হয় শতাধিক তোরণ। এ ছাড়া রং-বেরঙের ব্যানারে পোস্টার ছেয়ে যায় পুরো উপজেলা সদর। শহরের প্রধান সড়কটির খানাখন্দগুলো গত কয়েক দিনে ভরাট করে পিচ ঢালাই করা হয়।