রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আস্থা নেই: রানা দাশগুপ্ত
দুর্গাপূজায় মন্দির, মণ্ডপে হামলা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর এবং তাঁদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আস্থা হারিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত এসব ঘটনার প্রতিবাদে আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত এ মন্তব্য করেন। হামলার প্রতিবাদে আগামী শনিবার সারা দেশে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণ–অনশন, গণ–অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে রানা দাশগুপ্ত বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আমাদের আর আস্থা নেই। অব্যাহতভাবে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীদের মধ্যে একাত্তরে পাকিস্তানি ভাবধারার প্রেতাত্মা যেমন আছে, তেমনি অন্যান্য দলের লোকও রয়েছে। রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, সরকারি দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা লোক হামলায় ছিল। মুজিব কোট গায়ে দিয়ে তারা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। যেমন কর্ণফুলী থানায় ‘জয় বাংলা’ ক্লাবের পক্ষ থেকে হামলা হয়েছে। যেখানে দুই ভাই সদ্য বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।
কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনার জের ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হামলার ঘটনার তালিকা তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিজয়া দশমীর দিন নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পূজামণ্ডপে যতন সাহাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। ইসকন মন্দিরের প্রভু মলয় কৃষ্ণ দাসকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। গতকাল সকালে ইসকন মন্দিরের পুকুরে জনৈক ভক্তের লাশ ভেসে ওঠে। একই দিনে চট্টগ্রাম মহানগরের জে এম সেন হলেও হামলা হয়েছে। এর আগে চাঁদপুরে হামলায় মানিক সাহা নামে একজন মারা যান।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ আর নেই। আমরা মনে করি ও বিশ্বাস করি, সবটাই পরিকল্পিত। যার মূল লক্ষ্য, এক দিকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিসরে বিনষ্ট করা, অন্য দিকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে অগ্রসরমান উন্নতিকে ব্যাহত করা। এ ছাড়া বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিতাড়িত করে গোটা দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করা।
সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিনবোধি ভিক্ষু, পরিষদের উত্তর জেলার সভাপতি রণজিৎ দে, নগর সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষ, পরিষদ নেতা বিজয় লক্ষ্মী দেবী, তাপস হোড়, প্রদীপ কুমার চৌধুরী, রুবেল পাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আজ সকাল থেকে নগরের আন্দরকিল্লা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন ধর্মের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। এ সময় তাঁরা শুক্রবারের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ডাকা হরতালের সমর্থনে মিছিল–সমাবেশ করেন। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রানা দাশগুপ্তসহ অন্য নেতারা।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘বিজয়া দশমীর দিন চট্টগ্রামের জে এম সেন হল এবং নোয়াখালীতে হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে লোকজন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। আমরা হরতালের ডাক দিয়েছিলাম। এ ছাড়া প্রতিমা নিরঞ্জন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ কেউ বিভ্রান্ত হয়ে প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছেন।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমরা এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
গত শুক্রবার হামলার ঘটনার পর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আজ চট্টগ্রামে আধা বেলা হরতালের ডাক দিয়েছিল। হরতাল চলাকালে আন্দরকিল্লা ও এর আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও অন্যত্র চলাচল করেছে।