একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ও পরিবহন ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব সাংসদ মুজিবুল হক। তিনি বলেছেন, ‘সড়কমন্ত্রীকে বলব আপনি পদ্মা ব্রিজসহ অনেক উন্নয়ন করেন, কিন্তু আপনি টোটালি ফেইল ট্রান্সপোর্টেশনের বিষয়ে।’
আজ রোববার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দেওয়া বক্তব্যে মুজিবুল হক এ মন্তব্য করেন। তিনি রাজধানীতে পরিবহন ব্যবস্থাপনার কঠোর সমালোচনা করেন। পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে সরকারের যোগসাজশ আছে কি না, সে প্রশ্নও তোলেন।
সংসদে জাতীয় পার্টির সাংসদ বলেন, ‘২৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আজকে আটকা। ঢাকা শহরে আজকে গাড়ি চলে না। ভালো বাস নেই। সরকারের কী নতুন ৫০০-১০০০ বাস নামানোর সক্ষমতা নেই? মানুষ নিজের টাকা দিয়ে টিকিট কিনে গাড়িতে যাবে। কিন্তু লাইনের পর লাইন। টিকিট কিনে ওঠার কোনো বাস নেই। এত অপ্রতুল পরিবহন। এ বিষয়টিতে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করব।’
রাজধানীতে একটি উড়ালসড়কে দুর্ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে মুজিবুল হক বলেন, একজন ছাত্রী স্কুটি নিয়ে যখন ফ্লাইওভারে ওঠে, তখন একটি গাড়ির ধাক্কায় মারা যায়। গত বুধবার কামরুন্নেসা স্কুলের শিক্ষার্থীকে আনতে গিয়ে এক মা পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় ব্রেকহীন বাসের ধাক্কায় মেয়ের সামনে গাড়ির চাকার নিচে পড়ে মারা যান। মঙ্গলবার মিরপুরে বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারায় সাবিনা ইয়াসমিন।
মুজিবুল হক বলেন, ‘বর্তমান সরকার অনেক উন্নয়নের দাবিদার। হ্যাঁ, উন্নয়ন অনেক করেছে। কিন্তু রাজধানী শহর ঢাকায় ট্রান্সপোর্টের একটি নীতিমালা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা চোখে দেখিনি।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ঢাকা শহরে ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। ঢাকা শহরে যেসব বাস চলে, তার বেশির ভাগই পুরোনো ও লক্কড়ঝক্কড়। লাইসেন্স নেই, কোনো আইন মানে না, রাস্তায় যেখানে–সেখানে পার্ক করে রাখে।
নিজের পাশের আসনে বসে থাকা জাতীয় পার্টির সাংসদ মসিউর রহমানকে ইঙ্গিত করে মুজিবুল হক বলেন, ‘আমার পাশে বসেছেন বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির সভাপতি। ওনাদেরকে বলব, আপনারা মানুষের প্রতি দরদি হন। যে সমস্ত গাড়ি, ব্রেক নেই, পুরোনো ইঞ্জিন, রং নেই, এগুলো সরকার—কেউ দেখে না। আপনারা সরকারের সঙ্গে যোগসাজশে জনগণকে কষ্ট দিচ্ছেন।’
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করে মুজিবুল হক বলেন, তিনি ব্যবসা করেন না। তাঁর অসত্য কথা বলার প্রয়োজন নেই। এক সপ্তাহ আগে যে বেগুনের দাম ছিল ৪০ টাকা পরশু দিন বাজারে গিয়ে তিনি দেখেছেন তার দাম ৭০ টাকা। ৩০ টাকার শসা ১০০ টাকা, ৩০ টাকার পেঁয়াজের কেজি ৩৫ টাকা। চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। ৬৩০ টাকার গরুর গোশত ৬৫০ টাকা। শুধু সয়াবিন তেলের দাম কমেছে।
পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে মুজিবুল হকের বক্তব্যের জবাব দেন জাতীয় পার্টির সাংসদ মসিউর রহমান। মসিউর রহমান বলেন, ‘আমার কলিগ, আমি ওনার (মুজিবুল হক) আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলাম দুই বছর। সে ক্ষোভে কি না বা আমি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি, সে ক্ষোভে কি না বা জনগণের দুর্দশা দেখে কি না, কীভাবে উনি বলেছেন আমি বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ করে পরিবহনের কথাটা আমাকে বললেনও না।’
মসিউর রহমান দাবি করেন, ঢাকায় যানজটের কারণে এখন একটি বাস তিনটির বেশি ট্রিপ দিতে পারে না। আয় আগের তুলনায় কমে গেছে। বাসের ফিটনেস আছে কি না, সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিআরটিএ দেখে। ফিটনেস না থাকলে জরিমানা করা হয়, বাস ডাম্প করা হয়।
মসিউর রহমান বলেন, কোনো গাড়ির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা তাঁকে বললে তিনি সংসদে বসেই জরুরি ব্যবস্থা নিতে পারতেন।