২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মওদুদের মরদেহ আসছে কাল, শোক পালন করবে বিএনপি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ
ফাইল ছবি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে বৃহস্পতিবার দেশে আনা হচ্ছে। বর্ষীয়াণ এই নেতার মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার শোক কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদ।

আজ বুধবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, মওদুদ আহমদের জন্য বৃহস্পতিবার শোক কর্মসূচি পালন করবেন তাঁরা। প্রয়াত এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রথম আলোকে জানান, কাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মওদুদ আহমদের মরদেহ ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এরপর রাতে মরদেহ গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে।

শুক্রবার সকাল ১০টায় হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে মওদুদ আহমদের জানাজা হবে। এরপর বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জানাজা হবে। তারপর মরদেহ নেওয়া হবে মওদুদ আহমদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানিকপুরে। তার আগে কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজ মাঠে তাঁর আরেক দফা জানাজা হবে। নিজ গ্রামে জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে।

স্পিকারের অনুমতি না মেলায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় মওদুদ আহমদের জানাজা হচ্ছে না বলে শায়রুল কবির জানিয়েছেন।

৮১ বছর বয়সী মওদুদ আহমদ রাজনীতির পাশাপাশি আইন পেশায় যুক্ত ছিলেন। অনেকগুলো বইও লিখেছেন তিনি। তিনি পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের জামাতা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। একাত্তরে ইয়াহিয়া খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর আইনজীবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মওদুদ আহমদ। তিনি ওই মামলায় আদালতে বঙ্গবন্ধুর আত্মপক্ষ সমর্থন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ
ফাইল ছবি

মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকার তাঁকে পোস্টমাস্টার জেনারেল ঘোষণা করেছিল।
আইন পেশা ও রাজনীতির বাইরে মওদুদ আহমদের লেখক সত্তা ছিল উঁচু মানের।

সমকালীন রাজনীতি নিয়ে তাঁর লেখা বইগুলো সচেতন পাঠকমহলে বেশ আলোচিত ছিল। বাংলাদেশের রাজনীতির নানা ঘটনাপ্রবাহের সত্য বয়ান নিজের বিভিন্ন বইয়ে উপস্থাপন করেছেন তিনি। এ নিয়ে নিজ দল বিএনপিতেও নানা সময়ে তাঁকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। মওদুদ আহমদের বইগুলোর মধ্যে ‘বাংলাদেশ: স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা’, ‘বাংলাদেশ: শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল’, ‘গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ—প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সামরিক শাসন’, ‘বাংলাদেশ: আ স্টাডি অব দ্য ডেমোক্রেটিক রেজিমস’, ‘কারাগারে কেমন ছিলাম’, ‘বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ (২০০৭-২০০৮)’ উল্লেখযোগ্য। তাঁর লেখা এসব বই সমকালীন রাজনীতি ও ইতিহাসের অন্যতম দলিল হিসেবেও স্বীকৃত।

মওদুদ আহমদ
ফাইল ছবি

মওদুদ আহমদের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে যুক্তরাজ্যে বার-অ্যাট-ল ডিগ্রি নেন। পরে দেশে ফিরে তিনি আইন পেশায় যুক্ত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য হন। এরপর আরও পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বিএনপি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও মওদুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে তিনি প্রথমে মন্ত্রী ও পরে উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ১৯৮২ সালে এইচ এম এরশাদ সামরিক শাসন জারি করার পর বিশেষ সামরিক আদালতে তাঁর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। যদিও এর কয়েক বছরের মধ্যেই এরশাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি এরশাদ সরকারের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পরও মওদুদ আহমদ জাতীয় পার্টিতে ছিলেন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি আবার বিএনপিতে ফেরেন। সর্বশেষ ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারে তিনি আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।