ভাস্কর্যের ঘটনায় পেছন থেকে মদদ দিচ্ছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
ভাস্কর্য নিয়ে বিএনপির ভূমিকা প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) ভূমিকা পরিষ্কার। পেছন থেকে মদদ দিচ্ছে তারা। তারাই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক। এটা প্রমাণিত।’
রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আজ সোমবার সকাল নয়টার দিকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ সেই দিন, ১৪ ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বরের আগে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসররা নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে এই দিনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অপহরণ করে হত্যা করে। এটা মেধা ও মননের ওপর আঘাত।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনাই ছিল অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির লক্ষ্য নিয়ে জাতির পিতার নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়া মৌলবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা করেছেন। তাই মৌলবাদীদের শিকড় অনেক গভীরে। এককথায় এদের মূলোৎপাটন করা সম্ভব নয়
জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য আঘাত করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরেও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এখনো ষড়যন্ত্র করছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শপথ হবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষবৃক্ষ সমূলে উৎপাটিত করার। সে লক্ষ্য সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আজ সকাল সাতটা থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন নানা শ্রেণি-পেশা-ধর্ম-বর্ণ-রাজনৈতিক দল–নির্বিশেষে ব্যক্তি ও সংগঠন।
আজ সকাল সাতটায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-১৬ আসনের সাংসদ ইলিয়াস মোল্লা, ঢাকা-১৪ আসনের সাংসদ আসলামুল হক ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।
সকাল ৭টা ১০ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর শহীদ বেদিতে জাতীয় সংসদের স্পিকারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
মৌলবাদী রাজনীতি প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনাই ছিল অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির লক্ষ্য নিয়ে জাতির পিতার নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়া মৌলবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা করেছেন। তাই মৌলবাদীদের শিকড় অনেক গভীরে। এককথায় এদের মূলোৎপাটন করা সম্ভব নয়।’
রাজাকারদের তালিকা প্রসঙ্গে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আগে রাজাকারদের তালিকা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল, আইনগত কোনো ভিত্তি ছিল না। ১৫ দিন আগে মন্ত্রিসভায় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের সংশোধন করে রাজাকারদের তালিকা করার জন্য অনুমোদিত হয়েছে।’ জাতীয় সংসদে আগামী অধিবেশনে রাজাকারদের তালিকা প্রণয়নের আইন পাস হয়ে যাবে বলে তাঁর আশা।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই তালিকা করার সময় যাতে কারও প্রতি আক্রোশের বশবর্তী না হই, আবার কারও প্রতি বাড়তি ফেভার বা আনুকূল্য দেখানোর জন্য কাউকে যেন বাদ দেওয়া না হয়, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমরা যেন তৃণমূল থেকে এ তালিকা করতে পারি, আইন পাস করার পরে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এটা সরকারপ্রধান নীতি নির্ধারণ করেন। তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আইন হোক বা না হোক, আমরা ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে ঘৃণা করি, প্রত্যাখ্যান করি এবং এর বিরোধিতা করি।’