খালেদা জিয়াকে বিদেশে না পাঠানো পর্যন্ত বিএনপির কর্মসূচি চলবে
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে তাঁর উন্নত চিকিৎসাকেই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে বিএনপি। তাই যত দিন না সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে, তত দিন কর্মসূচিতে বিরতি দেবে না দলটি। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলছেন, ঢাকায় মহাসমাবেশ, অবস্থা বুঝে ট্রেনমার্চ ও লংমার্চ করারও চিন্তা রয়েছে তাঁদের।
আজ বুধবার ধারাবাহিকভাবে ৩২ জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি শুরু হচ্ছে বিএনপির। এসব কর্মসূচি ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে ২২, ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর বিভিন্ন বিভাগের জেলা সদরে প্রতিদিন ৬টি সমাবেশ হবে। আর ২৮ ও ৩০ ডিসেম্বর প্রতিদিন ৭টি করে সমাবেশ হবে জেলা পর্যায়ে। প্রথম দিনে আজ ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইলে, খুলনা বিভাগের যশোরে, রংপুর বিভাগের দিনাজপুরে, রাজশাহী বিভাগের বগুড়ায়, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে দলের জ্যেষ্ঠ ও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ বিকেলে টাঙ্গাইলের সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি থাকবেন। হবিগঞ্জের সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বগুড়ার সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দিনাজপুরে নজরুল ইসলাম খান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সমাবেশে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রধান অতিথি থাকবেন।
এ ছাড়া ২৪ ডিসেম্বর গাজীপুরের সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম, জয়পুরহাটে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জামালপুরে নজরুল ইসলাম খান, নোয়াখালীতে আবদুল্লাহ আল নোমান ও ভোলায় মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রেখে তাঁর উন্নত চিকিৎসার প্রশ্নে সরকার যে অমানবিক অবস্থান নিয়েছে, সেখান থেকে নাড়াতে যত দূর যাওয়া দরকার, বিএনপি তত দূর পর্যন্ত যাবে। কারণ, খালেদা জিয়া কেবল বিএনপির চেয়ারপারসনই নন, তিনি এই মুহূর্তে দেশের রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদী শক্তির মূল নিয়ামক এবং ঐক্যের প্রতীক। তাই দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের আন্দোলনকে এক ও অভিন্ন বলে মনে করছে বিএনপি। যেটাকে দলের নীতিনির্ধারকেরা ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের’ আন্দোলন বলে উল্লেখ করে আসছেন।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবির কর্মসূচিতে মানুষের সমর্থন রয়েছে। সরকারের একরোখা মনোভাবকে এ ক্ষেত্রে ভালোভাবে নিচ্ছে না মানুষ। তাই সরকার যত দিন সুচিকিৎসার দাবি না মানবে, তত দিন তাঁরা মাঠের কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
বিএনপির নেতাদের দাবি, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার বিষয়ে মানুষের সহানুভূতি তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের প্রতি ক্ষোভ ও বিরক্তি বাড়ছে। এটাকে মাঠে নামার সুযোগ হিসেবেও নিয়েছেন তাঁরা। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারছিলেন না, কিন্তু খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবিতে কর্মসূচি পালন করতে পারছেন।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূল জিনিসটা হলো আমরা তো দাঁড়াতে পারতাম না। আমাকে দাঁড়াতে দিত না। সে জায়গায় আমরা দাঁড়াচ্ছি এবং দলকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসতে পারছি। এ ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমরা গেইন করছি। এই স্পেস তো আগে ছিল না।’
গত ১৩ নভেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। তাঁর চিকিৎসকেরা বলেছেন, জটিল রোগ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত তিনি। কয়েক দফা রক্তক্ষরণের কারণে তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়েন।
এখনো সংকটাপন্ন অবস্থা কাটেনি। খালেদা জিয়ার পরিবার ও তাঁর দল বিএনপি উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশের হাসপাতালে পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কোনো আবেদন-নিবেদনে সরকারের সাড়া না দেওয়ায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নামে বিএনপি। খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধন, সমাবেশ, গণ-অনশনসহ জেলা প্রশাসকদের স্মারকলিপি দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকারের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি করছি, যাতে ওনার (খালেদা জিয়া) সুচিকিৎসার ব্যাপারে সরকার সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা দূর করে।
আশা করি, এর মধ্যেই সরকার কর্ণপাত করবে, না হয় আমরা মহাসমাবেশ করব। এরপর প্রয়োজন হলে রোডমার্চ, ট্রেনমার্চ হবে। এটার শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে।’