সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এক হাত নিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি তাঁদের উদ্দেশে বলেন, বিটুমিনের রাস্তা টিকবে না। এটা মাথা থেকে দূর করেন। কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করেন। কংক্রিটের রাস্তা তৈরির পর ১০ বছরেও হাত দিতে হবে না। যা খরচ একবারেই হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, বিটুমিনের রাস্তা তৈরির জন্য মাইন্ড সেট করে বসে আছেন কার স্বার্থে? কারও না কারও স্বার্থে এই মাইন্ড সেট করে আছেন। পৃথিবীতে কোথাও এখন আর বিটুমিনের রাস্তা নির্মাণ করা হয় না।
আজ রোববার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর আয়োজিত ‘বাংলাদেশে মানসম্পন্ন সড়ক অবকাঠামো বিনির্মাণ: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসির সম্মেলনকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞরা সেমিনারে অংশ নেন।
সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘সড়ক নির্মাণে আমরা মনের আনন্দে টাকা খরচ করে যাচ্ছি। কিন্তু সড়কের জীবনচক্র (লাইফ সাইকেল) সম্পর্কে জোর দেওয়া হয় না। তা না হলে একসময় এই সম্পদ দায়ে পরিণত হবে।’
সমালোচনা করে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঢাকা থেকে বের হলে আপনি বুঝবেন না, আপনি চট্টগ্রাম যাচ্ছেন, নাকি সিলেট যাচ্ছেন, নাকি আবার ঢাকা ফিরে আসছেন। সড়কে এই সংক্রান্ত কোনো সিগনাল নেই।’
নাগরিকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা একদিকে আট লেনের মহাসড়ক চাই, আবার দৌড়ে রাস্তা পার হই। নাগরিকদের রাস্তা পারাপারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর উদ্যোগ নিতে পারে।’
তাঁর মতে, এখন যেভাবে সড়ক-মহাসড়ক তৈরি হচ্ছে, তাতে ২০৪১ সালের লক্ষ্য পৌঁছানো যাবে না। এ জন্য তিনি সড়ক নির্মাণের পদ্ধতি পরিবর্তনের সুপারিশ করেন।
একই অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচক নগরপরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, রাজনৈতিকভাবে প্রকল্প নেওয়া হয়। ফ্লাইওভার বানানো হয়। কিন্তু যাতায়াত মসৃণ হয় না। পরিকল্পনার অভাব আছে।
আরেক আলোচক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগে অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘আমরা শুধু ফ্লাইওভার নির্মাণ করছি। ইন্টারসেকশন নির্মাণ করছি না।’ কুড়িল ইন্টারসেকশনটি একটি ভালো উদাহরণ বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, ‘আমরা সড়ক নির্মাণের সময় মোড়গুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা রাখছি না। এর ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।’
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির কারণে অনেক সময় জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা নির্মাণ করতে হয়। কিছু সড়কের কাজ সময় নিয়ে করা হয়। যেসব সড়ক সময় নিয়ে করা হয়, সেগুলোর অবস্থা বেশ ভালো। গত ১০ বছরে সড়কে অনেক উন্নতি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সড়ক গবেষণাগারের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন। আরও বক্তব্য দেন লেখক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান।