বিএনপির কর্মী বানিয়ে কারাগারে পাঠাল পুলিশ, ভাই বললেন ‘রাশির দোষ’

মো. তারিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

ইউনিটি থ্রু পপুলেশন সার্ভিসের কর্মী মো. ওবায়দুল্লাহর সঙ্গে মো. তারিকুল ইসলামের সবশেষ কথা হয়েছিল ১৭ আগস্ট সকালে। করোনার প্রথম ডোজ এই কেন্দ্র থেকে নিয়েছিলেন। তিনি বেরিয়েছিলেন দ্বিতীয় ডোজ নিতে। টিকা আর নিতে পারেননি। তার আগেই পৌঁছেছেন কারাগারে।

মো. ওবায়দুল্লাহ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিকার কথা মনে করিয়ে দিতে আমি ফোন করেছিলাম তারিকুলকে। তখন সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা হবে। উনি বললেন, সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা লাগবে টিকাকেন্দ্রে পৌঁছাতে। কিন্তু তিনি আর আসেননি।’ ওবায়দুল্লাহ পরে খবর পান তারিকুল ইসলামকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।
১৭ আগস্ট চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তারিকুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। ওই দিন সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মহানগর বিএনপির নবগঠিত দুই কমিটির নেতাদের সঙ্গে কয়েক হাজার কর্মী জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চন্দ্রিমা উদ্যানে যান। জমায়েতে বাধা দিলে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে জমায়েতকে ছত্রভঙ্গ করে দেন।

পরে এ ঘটনায় পুলিশ ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে মামলা করে। পুলিশের করা মামলায় বিএনপির নেতা আমান উল্লাহ আমানসহ ১৫৫ জন এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের মামলায় অজ্ঞাতনামা দুই-তিন হাজারজনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে পুলিশ ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে তারিকুলও পড়ে যান। তাঁকে পুলিশ বিএনপির কর্মী হিসেবে দেখায়। অভিযোগ তোলা হয় পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার। স্বজনেরা বলেন, টিকা কার্ড দেখিয়েও তারিকুল রেহাই পাননি। আদালত চত্বরে ভাই মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে পরদিন দেখা হয়েছিল। কী করে এমন হলো জানতে চাইলে জবাব দিয়েছেন, ‘সবই রাশির দোষ।’

শফিক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই একটি বহুজাতিক কোম্পানির উত্তরা অঞ্চলের ফিল্ড সেলস এক্সিকিউটিভ ছিলেন। ওই সময় টিকা দেওয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করেছিলেন উত্তরার ইউনিটি থ্রু পপুলেশন সার্ভিস (ইউটিপিএস) কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রটি উত্তরায়। কোরবানি ঈদের পর তিনি মাদারীপুরে বদলি হয়ে যান। দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে তিনি ১৬ আগস্ট ঢাকায় আসেন। এরপর তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তাঁরা তারিকুলের এক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারেন তাঁকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।

আসলে তাঁর ভাইও সবটা জানেন না। তারিকুলদের পুরো পরিবার পিরোজপুরের রাজাপুরে থাকেন। ঘটনা সম্পর্কে কিছুটা জানেন তারিকুলের বাল্যবন্ধু মো. জিয়া। তবে ঠিক কোন পরিস্থিতিতে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, সেটা তাঁর বন্ধু মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত জানার কোনো উপায় নেই।

মো. জিয়া প্রথম আলোকে বলেন, পিরোজপুরের রাজাপুরে তাঁরা দুজন একসঙ্গে বড় হয়েছেন। ঢাকায় এলে তারিকুল তাঁর বাসাতেই ওঠেন। ১৬ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারিকুল ফোন করে ঢাকায় আসার কথা জানান। এবার তিনি জিয়ার বাসায় ওঠেননি। উঠেছিলেন এক আত্মীয়ের বাসায়। পরদিন বেলা ১টা ১৯ মিনিটের দিকে তারিকুল ফোন করেন। মিটিংয়ে থাকায় জিয়া ফোন ধরতে পারেননি। ১০ মিনিট পর ফিরতি ফোন করলে তারিকুল জানান, তাঁকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আর কোনো কথা বলতে পারেননি তিনি। তারিকুল কি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পারিবারিকভাবে তারিকুলরা আওয়ামী লীগের কর্মী। দলে পদ পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

গ্রেপ্তারের পর তারিকুলের পরিবার এখন রাজাহাট আওয়ামী লীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া প্রত্যয়নপত্র নিয়ে ছোটাছুটি করছেন। ওই প্রত্যয়নপত্রে লেখা, ‘তারিকুল ইসলাম খান রাজাপুর উপজেলার ৫ নং বড়ইয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য। আমার জানামতে তিনি দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থীমূলক কোনো কার্যকলাপে জড়িত নহেন। আমরা তাহার সার্বিক সাফল্য কামনা করি।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহও বলেছেন, তারিকুল তাঁদের কর্মী নন। তিনি ছাড়াও আরও দুজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, যাঁরা ছিলেন নেহাত পথচারী।
এ বিষয়ে জানতে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানে আলম মুন্সীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোনো পথচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি তদন্ত চলছে। তদন্তে নির্দোষ প্রমান হলে তরিকুল ছাড়া পাবেন।